‘বর্তমান শিক্ষার প্রধান ধারা বেসরকারি ও বাণিজ্যিক’

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও রাষ্ট্র শিক্ষার দায়িত্ব নেয়নি। বেসরকারি ও বাণিজ্যিক ধারাই বর্তমানে শিক্ষার প্রধান ধারা। ‘টাকা যার শিক্ষা তার’— এই নীতিতেই চলছে শিক্ষাব্যবস্থা। একাদশ কর্মী সদস্য সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে এসব কথা বলেন বক্তারা।

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষা-গণতন্ত্র-মনুষ্যত্ব রক্ষার সংগ্রামের চার দশকে ১ থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি-২০২৪ সংগঠনের একাদশ কর্মী সদস্য সম্মেলন উপলক্ষে ছাত্র সমাবেশ ও মিছিল আয়োজন করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুক্তা বাড়ৈর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সুস্মিতা মরিয়ম, দফতর সম্পাদক অনিক কুমার দাস, অর্থ সম্পাদক সুলতানা আক্তার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হারুন অর রশীদ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও রাষ্ট্র শিক্ষার দায়িত্ব নেয়নি। বেসরকারি ও বাণিজ্যিক ধারাই বর্তমানে শিক্ষার প্রধান ধারা। 'টাকা যার শিক্ষা তার' এই নীতিতেই চলছে শিক্ষাব্যবস্থা। সংবিধানের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদে একই পদ্ধতির শিক্ষার কথা বলা হলেও চলছে সাধারণ, ইংরেজি মাধ্যম, কারিগরি, ক্যাডেট, মাদ্রাসা ইত্যাদি ধারার শিক্ষা। সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক স্তরও সব শিশু শেষ করতে পারে না। শিক্ষায় বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারীকরণ নীতির ফলে উচ্চশিক্ষায় ব্যয় বৃদ্ধি ঘটছে তীব্র আকারে। জনগণকে জিম্মি করে চলছে শিক্ষার রমরমা ব্যবসা।

প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের মতামত নিয়ে শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন ও পরিমার্জন করার দাবি সংগঠনটির

তারা আরও বলেন, ইউনেসকো শিক্ষা খাতে জিডিপির ৬ ভাগ বরাদ্দের কথা বললেও, এ বছর আমাদের বরাদ্দ মাত্র ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যেটি গতবারের চেয়ে শূন্য ৭ শতাংশ কম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। ক্যাম্পাসগুলোয় শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের দ্বারা গণরুম-গেস্টরুমে নির্যাতনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ ও শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংস করা হয়েছে।

যথাযথ প্রস্তুতি ও মূল্যায়ন-মতামত ছাড়াই জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ চালু করা হয়েছে অভিযোগ করে তারা বলেন, এই শিক্ষাক্রমের অনেক সীমাবদ্ধতা, পাঠ্যপুস্তকের অসঙ্গতি, শিক্ষকদের প্রস্তুতির ঘাটতি রয়েছে। ফলে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকরা পড়ছেন বিপাকে। এ ছাড়া এই শিক্ষাক্রমে মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে কারিগরিভাবে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা, প্রকৃত মানব সৃষ্টি করা নয়। তাই ছাত্র ফ্রন্ট দাবি করছে, ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকসহ দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের মতামত নিয়ে শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন ও পরিমার্জন করার।

সমাবেশ ও মিছিল শেষে সেগুনবাগিচায় স্বাধীনতা হলে ১ থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি তিন দিনব্যাপী একাদশ কর্মী সদস্য সম্মেলনের পাঠচক্র শুরু হয়েছে। রাজনীতি, অর্থনীতি ও শিক্ষানীতি বিষয়ে এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পাঠচক্রে অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিখিল দাস, জর্নাদন দত্ত নান্টু।