সংসদে প্রতিবন্ধীদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতে চান সালমা মাহবুব

প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রশ্নে সবার আগে দেখা যায় যে লড়াকু নারীকে— তার নাম সালমা মাহবুব। শৈশব থেকে পোলিও’র সঙ্গে লড়াই উঠে আসা সালমা মাহবুব গত কয়েক দশক ধরেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত ও সাহসী মুখ। এবার তিনি সংসদে গিয়ে উচ্চারণ করতে চান— প্রতিবন্ধীরা জাতির বোঝা নয়, সম্পদ। এরইমধ্যে তিনি সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তিনশ আসনের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অনেক কঠিন হওয়ায় সংরক্ষিত আসনে হলেও যদি তাদের প্রতিনিধিত্ব থাকে, তাহলে তাদের অধিকার নিয়ে আরও সুসংগঠিতভাবে কথা বলার জায়গা তৈরি হতো বলে মনে করেন সালমা।

যারা প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করেন তারা জানেন, প্রায় দুই দশক ধরে হুইলচেয়ারে বসেই নিরলস ছুটে চলেছেন সালমা মাহবুব এবং সক্রিয়ভাবে অধিকার আন্দোলন নিয়ে কাজ করে চলেছেন, বিশেষত নারী প্রশ্নে। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি সর্বত্র প্রতিবন্ধীবান্ধব নীতি প্রণয়ন, যেসব নীতি ও প্রতিশ্রুতি আছে সেগুলো কার্যকর করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তা ও তাদের সব ধরনের প্রয়োজনে তিনি পরিচিত মুখ।

কেন সংসদে যাওয়ার কথা ভাবলেন প্রশ্নে সালমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি গত প্রায় দুই দশক ধরে কাজ করছি। কিন্তু কখনও সংসদে যাওয়ার বিষয়ে ভাবিনি। এবার প্রতিবন্ধী বন্ধুদের কাছ থেকেই এ দাবি এসেছে। তারা চেয়েছে আমি যেন মনোনয়ন নিই এবং সংসদে আমাদের প্রতিনিধিত্ব যেন নিশ্চিত হয়। তারা যখন আমাকে তাদের ইচ্ছের কথা জানালেন— তখন আমি তাদের বলেছি, কেবল আমি না, আরও যারা যারা চান তারাও মনোনয়নের জন্য এগিয়ে আসুন। নির্বাচিত হই বা না হই সেটা নিয়ে ভাবিনি। আমরা যে আমাদের কণ্ঠস্বর সংসদে তুলে ধরতে চাই, এটা সেটারই প্রথম পদক্ষেপ।’

প্রতিবন্ধিতার কারণে নিজে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিতে পারেননি সালমা। কিন্তু জীবনে ব্রত হয়ে ওঠে— তার মতো আরও যারা আছেন, এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী কীভাবে আরেকটু সামনে আসবে, সেই পথ তৈরি করে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা। তিনি কাজ করতে নেমে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায়, নানান উদ্যোগে প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দিয়েছেন ও নিয়েছেন প্রশিক্ষণও।

সালমা মাহবুব (ফাইল ফটো)সালমা মাহবুব ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ফ্রেশওয়াটার অ্যাকশন নেটওয়ার্ক সাউথ এশিয়ার সহ-আহ্বায়কও নির্বাচিত হন। তিনি এখন বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক (বিএডব্লিউআইএন), ন্যাশনাল গার্ল চাইল্ড অ্যাডভোকেসি ফোরাম (এনজিসিএএফ) এবং স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অলের (এসডব্লিউএ) সদস্য হিসেবে কাজ করছেন।

২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ (এনএসপিডি) ২০২১’ এর ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করা সালমা এখন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের 'প্রতিবন্ধিতা এবং অটিজম থিমেটিক গ্রুপ' এর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী পরিবারে জন্ম নেওয়া সালমার স্বপ্ন— প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী নারীদেরও কার্যকর অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।  তাদের জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ, রূপকল্প ২০৪১ এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সব নাগরিকের জন্য বাধাহীন অন্তর্ভুক্তিমূলক সোনার বাংলা গড়ে তোলা।

তিনি তার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকার অনেক ধরনের কাজ করেছে। এই দেশে এক সময় আমরা ভাবিনি সরকারি-বেসরকারি ভবন ও টয়লেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতা নিয়ে কেউ ভাববে। সরকারি নানান প্রতিষ্ঠানে এখন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য র‍্যাম্প হবে, এটা কারোর চিন্তাতেও ছিল না। ঢাকার ফুটপাতে প্রথমবারের মতো টেকটাইল টাইলস লাগানো হয়েছে। সরকারের এত ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, মূলত আমাদের দাবি ও পরামর্শে। কিন্তু আমরা যদি এ সিদ্ধান্তগুলোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে পারি, তাহলে এ ভালো কাজগুলো আরও সংগঠিতভাবে হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সেই জায়গা থেকেই আমি এ উদ্যোগ নিয়েছি।’