মাদক মামলায় যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসানের বদলে মিরাজুল ইসলামের সাজা খাটার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে (আইও) তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ যেন আলোচিত ‘আয়নাবাজি’ সিনেমার কাহিনির বাস্তব রূপ।
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদ নজরে আনার পর বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি আতাউর রহমানের নেতৃত্বাধীন একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
এর আগে ২০২০ সালের আগস্ট মাসে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল ও গাঁজাসহ আনোয়ার হোসেন নামে একজনকে আটক করে। তবে পালিয়ে যান মাদকচক্রের মূল হোতা যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান। এ ঘটনায় দুজনকে আসামি করে মামলা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। বিচারে অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় পলাতক নাজমুল হাসানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন নিম্ন আদালত।
নাজমুল ঢাকার উত্তরার ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা। কিন্তু এই পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে যিনি জেল খেটেছেন, তার প্রকৃত নাম মিরাজুল ইসলাম।
এ ঘটনা নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে ওই প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের নজরে আনেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আইনজীবী জানান, সাজাপ্রাপ্ত ওই আসামি মাদক কারবারের মূল হোতা মো. নাজমুল হাসান। ঢাকার উত্তরার ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের এই নেতার বাবার নাম আবুল হাসেম চেয়ারম্যান। কিন্তু নাজমুল হাসানের পরিচয় দিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে যিনি জেল খেটেছেন, তার প্রকৃত নাম মিরাজুল ইসলাম। টাকার বিনিময়ে চুক্তি করে নাজমুলের সাজা নিজের ঘাড়ে নিয়েছেন তিনি। যদিও চুক্তিমতো সব টাকা পাননি মিরাজুল। জামিনে বেরিয়ে এসে টাকা চাইতে গেলে উল্টো ৫০ পিস ইয়াবা দিয়ে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় তাকে।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসামি টাকা দিয়ে অন্যকে জেল খাটায় এবং সব আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে (মিরাজুল) দিয়ে ফেস করায়, যাতে নিজের কোনও সমস্যা না হয়। এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে নাজমুল নামে এক আসমির ক্ষেত্রে। তার সাত বছর সাজা হওয়ার পর সে মিরাজুলের সঙ্গে ৫০ হাজার টাকায় চুক্তি করে একং তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায়। এরপর মিরাজুল জামিন নেন, জামিন শুনানি আপিলে আসে। আজ রায় ছিল। ঘটনাটি আদালতের নজরে এনেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। আদালত যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছেন। তবে এটি চূড়ান্তভাবে যদি বন্ধ করতে হয়— সেক্ষেত্রে আমি বলবো, এটার একমাত্র উপায় হলো, প্রত্যেক জেলখানা ডিজিটালাইজড করা। প্রত্যেক আসামি ঢোকার সময় ফিঙ্গার দিয়ে ঢুকবে, যাতে তার এনআইডির সঙ্গে তথ্য যাচাই করা যায়।’