জাল টাকা ও জালিয়াত তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে একটি চক্র!

জাল টাকা কীভাবে তৈরি করতে হবে, এই কাজে কোন কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা সহজ হবে, কীভাবে এসব টাকা ছড়িয়ে দিতে হবে, কোথায় ও কীভাবে জাল টাকা তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া যাবে এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে একটি চক্র। ইউটিউব, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া হয় এই প্রশিক্ষণ। এসব মাধ্যমে এই চক্রের পেজ ও গ্রুপও রয়েছে।

জাল টাকা তৈরির অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এই তথ্য জানায়। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর কদমতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় জিসান হোসেন রিফাতকে (১৯)। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে র‌্যাব-১০ এর সিপিসি-১ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তার বিষয়ে নানা তথ্য জানান কোম্পানি কমান্ডার পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন মাহমুদ সোহেল।

জিসান হোসেন রিফাত

এই কর্মকর্তানা জানান, অল্প সময়ে বেশি টাকা আয়ের লোভে ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যবহার করে একটি চক্রের কাছ থেকে জাল টাকার নোট তৈরির প্রশিক্ষণ নেয় জিসান। এরপর নিজেই জাল নোট তৈরি শুরু করে। পাশাপাশি বিভিন্ন জনকে সরবরাহও করে আসছিল সে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, ডেমরা এবং নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাল টাকার নোট প্রস্তুত ও সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার ৯০০ টাকার বিভিন্ন মূল্যমানের জাল নোট এবং এসব নোট তৈরিতে ব্যবহৃত কম্পিউটারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

জব্দ করা সরঞ্জাম

জিজ্ঞাসাবাদে জিসান জানায়, জাল টাকা তৈরির ‘দক্ষতা’ অর্জন করার  পরে সে জাল টাকা তৈরির প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি কেনে। নিজের তৈরি করা জাল টাকা সরবরাহের জন্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেজ ও গ্রুপে সংযুক্ত হয়। একটি সংঘবদ্ধ চক্র টেলিগ্রাম অ্যাপ ব্যবহার করে জাল টাকা তৈরির প্রযুক্তি আদান-প্রদান করত। জাল টাকা বিক্রির পন্থা বলে দিত চক্রের সদস্যরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলে জাল নোট বিক্রি করত। ফেসবুক গ্রুপে জাল টাকা বিক্রির পোস্ট দিত। এরপর কেউ আগ্রহী হয়ে কমেন্ট করলে তাদের সঙ্গে মেসেঞ্জারে চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে সুবিধাজনক স্থানে জাল নোটগুলো সরবরাহ করা হতো।

জাল টাকা সরবরাহকারী চক্রটি মাছ বাজার, লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন মার্কেটে নানা কৌশল অবলম্বন করে জাল নোট সরবরাহ করে আসছিল। জিসান অধিক জনসমাগম হয় এসম অনুষ্ঠান বিশেষ করে বিভিন্ন মেলা, উৎসব, পূজা ও কোরবানির পশুর হাট উপলক্ষে বিপুল পরিমাণ জাল নোট ছাপিয়ে মজুদ করতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে জালনোট প্রিন্টিংয়ের সময় কাগজের অব্যবহৃত ও নষ্ট অংশগুলো পুড়িয় ফেলত। সে এখন পর্যন্ত ২ কোটি টাকার নোট বাজারে ছেড়েছে।