শুধু ফেব্রুয়ারি নয়, বছর জুড়ে বাংলা ভাষার চর্চা করতে হবে: দীপু মনি

শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে নয়, সারা বছরই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা করতে হবে বলে মনে করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘নিজের সন্তান বাংলা বলতে পারে না— এটা গর্বের নয়, লজ্জার। সন্তান যে মাধ্যমেই পড়ুক, তাকে বাংলা ভাষা শেখাতে হবে। তাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে হবে।’

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সেন্টার ফর এনআরবি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো তিন দিনব্যাপী ‘এনআরবি/পিবিও সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন ২০২৪’ এর দ্বিতীয় দিনে উপস্থিত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ডা. দীপু মনি। 

এসময় নুষ্ঠানের আয়োজকদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আয়োজকরা যতো উদ্যোগ নিয়েছেন তা লেগে থেকে করেছেন, এজন্য সফল হয়েছেন। এই উদ্যোগও সফল হবে।’

অনুষ্ঠানে তিনি ’জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু’ ‍শিরোনামে জাপানি মাঙ্গা আঙ্গিকে প্রকাশিত বইটির অডিও ভার্সনের উদ্বোধন করেন। জাপানিদের কমিক ও কার্টুন ধাঁচের চিত্রকলার একটি ফর্ম হচ্ছে ‘মাঙ্গা’। জাপান ইন্টারন্যাশনাল মাঙ্গা অ্যাওয়ার্ডে এবারের আসরে বিশ্বের ৮২টি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৫৮৭ জন অংশগ্রহণকারীরা অংশ নেন। ‘ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু’ বইটি এই প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে।

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি কবি, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিসেবীরা উপস্থিত হয়েছেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এবং সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর এনআরবি ফাউন্ডেশন ও স্কলার্স বাংলাদেশ সোসাইটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী দিলারা আফরোজ খান রূপা। 

ড. মসিউর রহমান বলেন, ‘প্রবাসীদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতি চর্চার জন্য এই সম্মেলন প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আমাদের প্রথম প্রজন্মের যারা প্রবাসে গেছেন তাদের ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি যথেষ্ট ভালোবাসা আছে। পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে হবে।’

বিশেষ অতিথি ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘প্রবাসীদের জন্য এই যে সাহিত্য ও সংস্কৃতির যে মঞ্চ তৈরি হয়েছে, সেটি চলবে। প্রবাসীদের বই প্রকাশ, বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, বই আলোচনার মাধ্যমে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সমৃদ্ধ হবে এই মঞ্চ। বইমেলা উপলক্ষে অনেক প্রবাসী ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে আসতে চান, তাদের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ বিমান ভাড়া কমাতে পারে। এতে প্রবাসীরা দেশে এসে বেশি বেশি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা করতে পারবেন।

অনুষ্ঠানে প্রথমে নিউইয়র্ক ও লন্ডনে এবং পর্যায়ক্রমে বাঙালি অধ্যুষিত সব দেশে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানান সেন্টার ফর এনআরবি ফাউন্ডেশন ও স্কলার্স বাংলাদেশ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এম ই চৌধুরী শামীম। তিনি বলেন, ‘২২৬ জন অনাবাসী লেখকের বই রয়েছে আমাদের ওয়েবসাইটে। শুধু প্রবাসী নয়, আমাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজেন্মর যারা আছে অর্থ্যাৎ যারা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তাদের আরো বেশি যুক্ত করার কাজ করছি আমরা। নিজের মেধা ও টাকা খরচ করে নিজ উদ্যোগে এসব কাজ করছি। বাংলা একাডেমি এবং সরকার আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলে এমন আয়োজন আরও অর্থবহ হবে।’

দিনব্যাপী আয়োজনে দুটি সেমিনার আয়োজন করা হয়। সকালের সেমিনারের বিষয় ছিল বিশ্বসাহিত্যে বাংলা সাহিত্যের অবস্থান: একটি পর্যালোচনা। আলোচক ছিলেন প্রবন্ধিক ও অনুবাদক অধ্যাপক আবদুস সেলিম, অনুবাদক আনিসুজ্জামান এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুচরিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঞ্চালনায় ছিলেন অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী। বিকালের সেমিনারের বিষয় ছিল প্রবাসে আগামী প্রজন্মকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চ্যালেঞ্জ ও করণীয়। মুখ্য আলোচক ছিলেন ট্যাম্পল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক  ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ। 

সাহিত্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে তিনটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইগুলো হলো- ড. নূরুন নবীর লেখা ‘জন্মেছি এ বাংলায়’, সৈয়দা জায়গীরদারের লেখা ‘দ্য সং অব দ্য জামদানি শাড়ি’ এবং নাসরীন শাহানা চৌধুরীর লেখা ‘ইলগে মানে নীল অপরাজিতা’। এতে তথ্যচিত্র প্রদর্শনী: মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রামাণ্যচিত্র ‘ড. নূরুন নবী: আজীবন মুক্তিযোদ্ধা’ দেখানো হয়। 

শনিবার তিন দিনব্যাপী সাহিত্য সম্মেলনের শেষ দিনে ১১টি ক্যাটাগরিতে ২৫ জনকে সম্মাননা দেওয়া হবে।