দায়িত্বশীলদের আইনের আওতায় না আনলে পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে: বিআইপি

নগর এলাকার সঠিক পরিকল্পনা, ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ ভবন নির্মাণ, কার্যকরী উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু নজরদারির জন্য সেবা সংস্থাগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করলে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এড়ানো সম্ভব। দায়িত্বশীলদের যথাযথ আইনের আওতায় না আনলে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে।

শনিবার (২ মার্চ) রাজধানীর বাংলামোটরে প্ল্যানার্স টাওয়ারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) উদ্যোগে 'বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড এবং ভবনে জীবনের নিরাপত্তা: বিআইপির পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান।

তিনি বলেন, রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনটির প্রথম থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক (শুধু অফিসকক্ষ হিসেবে) এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম তলা আবাসিক ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। ভবনটিতে রেস্তোরাঁ, শোরুম (বিক্রয়কেন্দ্র) বা অন্য কিছু করার জন্য অনুমোদন নেওয়া হয়নি। কিন্তু ভবনের মালিকরা পুরো ভবনটি বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহার করছিলেন, যেখানে অনুমোদনহীনভাবে বেশির ভাগই ছিল রেস্তোরাঁ, যা সুস্পষ্টভাবে ইমারত আইন ও নগর পরিকল্পনার ব্যত্যয়।

তিনি আরও বলেন, অতীতের অগ্নিদুর্যোগের ঘটনার মতোই রাজধানীর বেইলি রোডে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটিকে হত্যাকাণ্ড হিসেবেই বিবেচনা করা দরকার। এই ধরনের দুর্ঘটনা সেবা সংস্থাগুলোর গাফিলতিজনিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা না করলে এবং সংশ্লিষ্ট যেসব ব্যক্তি ও সংস্থা দায়িত্ব পালনে গাফিলতি, উদাসীনতা ও অন্যায় আচরণ করেছে, তাদের যথাযথ আইনের আওতায় না আনলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে।

বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, এক সপ্তাহের একটি জরুরি ব্যবস্থা সরকার কর্তৃক ঘোষণা করা, যেখানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমন আরও যত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে, তা চিহ্নিত করা এবং যারা এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা।

বিআইপির সহসভাপতি সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন বলেন, নকশাগত ত্রুটি ভবনগুলোয় অগ্নিকাণ্ড ঘটার অন্যতম কারণ। নান্দনিকতার জন্য কাচ দিয়ে ঘিরে যেই ভবনগুলো বানানো হচ্ছে, তাতে বায়ুপ্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভবনগুলো মরণফাঁদ হয়ে ওঠে। ভবনের মিশ্র ব্যবহার ও সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

ইনস্টিটিউটের যুগ্ম সম্পাদক তামজিদুল ইসলাম বলেন, মানুষের জীবনের চেয়ে অর্থনীতি বা মুনাফাকে প্রাধান্য দেওয়ার যে প্রবণতা, তা বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া রাজউক, সিটি করপোরেশন ও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

বিআইপির কোষাধ্যক্ষ পরিকল্পনাবিদ ড. মু. মোসলেহ উদ্দীন হাসান বলেন, জননিরাপত্তা ও জনস্বার্থ রক্ষা করার জন্য সরকারকে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে সামনে এগোতে হবে জোরালোভাবে।