সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তদারকির অভাবই অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা। অগ্নি নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতির উন্নয়নে নিরাপদ নগরী গঠন নিশ্চিতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া চৌধুরী হলে ‘ভবন বিপজ্জনকতায় আচ্ছন্ন নগরী: প্রেক্ষিতে করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়। যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এবং বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ল’ ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেলা)।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে দেশে নগরায়ণের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)-১১ অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, অভিঘাতসহনশীল এবং টেকসই নগর ও জনবসতি গড়ে তোলার কথা বলেছে। কিন্তু এখনও আমরা একটি নিরাপদ এবং অভিঘাত সহনশীল নগরী গড়ে তুলতে পারিনি। নগরে ঘটিত অগ্নিদুর্যোগ আজ বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে। অগ্নিদুর্যোগ প্রতিরোধে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সামগ্রিক কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে হবে।
বাপার সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘সারা দেশে গত ৯ বছর ১ লাখ ৯০ হাজার ১৬৭টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১ হাজার ৫১ জন নিহত এবং ৩ হাজার ৬০৬ জন আহত হয়েছেন। রাজধানীসহ সারা দেশে এ ধরণের অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ হলো, অননুমোদিত অবৈধ ভবন, অবৈধ ভূমি ব্যবহার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তদারকির অভাব।’
তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুমোদিত ব্যবহার পরিবর্তন অথবা সম্প্রসারণের মাধ্যমে রেস্তোরাঁয় রূপান্তরিত করা হচ্ছে অথবা ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করার কার্যক্রমে লিপ্ত হচ্ছে। একটি রেস্তোরাঁ স্থাপনে অনাপত্তিপত্র, রেস্তোরা লাইসেন্স, লাইসেন্স নিবন্ধন/নবায়ণ, দোকান লাইসেন্স, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স, ই-ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফায়ার লাইসেন্স, অনাপত্তি বা পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং অবস্থানগত ছাড়পত্র এ রকম ১০টি প্রত্যায়নপত্র প্রয়োজন হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তদারকি ছাড়াই এসব ছাড়পত্র দেওয়া অথবা ছাড়পত্রহীনভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনায় নিরুদ্বেগ থাকার কারণেই বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আইনের ব্যত্যয় এবং তদারকির অভাবে ক্রমাগত ঘটে যাওয়া এই অগ্নিকাণ্ডগুলোর জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো অর্থাৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পরিষেবা দেওয়া সংস্থা (ওয়াসা, তিতাস, ডিপিডিসি/ডেসা), আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সর্বোপরি ভবন মালিক দায়ী।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘দেশের নগরগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ট্র্যাজেডি বেশি হচ্ছে। আমাদের নগরায়ণের যে ধরণ সেটি অতিরিক্ত পুঞ্জিভূত। নতুন নগরগুলো যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী করা যেতো, তাহলে মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে শহরে এসে নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে হতো না।’
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, ‘রানা প্লাজা থেকে শুরু করে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা। ভবনের মালিকরা লোভী। তাদের কাছে দেশ, ধর্ম-কর্ম কিছু নাই। তাদের উদ্দেশ্য শুধু লাভবান হওয়া।’
বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে সাধারণ মানুষের জীবন যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সাধারণ মানুষ যখন মারা যায়, সে জীবনের যেন কোনও মূল্য নেই। রেস্তোরাঁগুলোতে অভিযান চালিয়ে যে সব সাধারণকর্মী আছে, শুধু তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এর কারণ, তারা দূর্বল। কিন্তু, ভবন মালিকরা শক্তিশালী হওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।’