‘স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠাকে রুদ্ধ করে রেখেছে’

বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে নারায়ন ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একই সঙ্গে বৈষম্য দূর করতে জাতীয় বাজেট তৈরির সময় জেন্ডার-সমতাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং নারী নির্যাতন ও হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

শুক্রবার (৮ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) নেতাকর্মীরা। মানববন্ধন আয়োজন করে বিসিডব্লিউএস।

মানববন্ধনে সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার বলেন, নারীর অধিকার ও উন্নয়নের মধ্যে মানবজাতির সার্বিক কল্যাণ নিহিত। অথচ স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও অসম ক্ষমতার চর্চা নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠাকে রুদ্ধ করে রেখেছে। অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রাখা নারীদের অধিকার, মর্যাদা রক্ষায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই।

পোশাক খাতে কর্মরত নারীদের অধিকার ও সুরক্ষা বাস্তবায়নে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তারা বলেন, পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এই খাতে কর্মরত অধিকাংশ নারী শ্রমিক। দেশের জিডিপির সিংহভাগ জোগান দেন তারা। অথচ তারা বৈষম্য ও সহিংসতার শিকার। উচ্চ আদালতে করা রিট পিটিশনে (৫৯১৬/২০০৮) যৌন হয়রানি ও সহিংসতা দূরীকরণে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকলেও তদারকির অভাবে নারীর প্রতি অপরাধ দিন দিন বাড়ছে। এ সময় নারীর অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষা আইন ও বিধি কার্যকর এবং যথাযথ প্রয়োগের দাবি জানান বক্তারা।

মানববন্ধনে নারী শ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়নে আট দফা সুপারিশ তুলে ধরেন তারা। তাদের সুপারিশগুলো হলো:

আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুস্বাক্ষর করতে হবে; কর্মক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যকরী যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে; অবিলম্বে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও হয়রানি বন্ধে পূর্ণাঙ্গ আইন ও বিধি গ্রহণ করতে হবে এবং তা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; জাতীয় বাজেট তৈরির সময় জেন্ডার-সমতাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে; নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক ও আগ্রাসী মনোভাব, পুরুষতান্ত্রিক অসম-ক্ষমতার চর্চা রুখতে সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরে নারীর অধিকার বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ, কর্মক্ষেত্রে এবং গণপরিবহনে নারী শ্রমিক তথা সব নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; শ্রম আইনের সংস্কার ও ব্যর্থতায় কঠোর শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে; এবং নারী নির্যাতন ও হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

বিসিডব্লিউএসের প্রকল্প কর্মকর্তা হালিমা আক্তারের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন নারী নেত্রী আঞ্জু আক্তার, সোয়েদা আক্তার নিশি আক্তার আইরিনসহ পোশাক খাতের বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের নেত্রীরা।