বিমানবন্দরে আর্মড পুলিশের হাতে মার খেলেন প্রবাসী

যেকোনও প্রবাসীর দেশ ত্যাগের মুহূর্তটি কষ্টের। পরিবার-পরিজন রেখে দেশ ছেড়ে যাওয়ার বেদনায় তারা থাকেন আপ্লুত। তাই বিমানবন্দরে প্রবেশের মুহূর্তে একটু বেশি সময় পরিবারের পাশে থাকতে চান প্রবাসীরা। অপরদিকে বিদায় জানাতে এসে আপ্লুত হয়ে যান স্বজনেরা। দেশ ত্যাগের মুহূর্তে সৌদি আরব প্রবাসী জাহিদ হাসান শাহজালাল বিমানবন্দরে তার বাবাকে একটু বেশি সময় কাছে রাখতে গিয়ে আর্মড পুলিশের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। 

অভিযোগ আছে, প্রবাসী জাহিদ হাসানের মতো অনেকেই বিমানবন্দরে এসে আর্মড পুলিশের রূঢ় আচরণের মুখোমুখি হচ্ছেন।

বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (২৪ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে সৌদি আরব প্রবাসী জাহিদ হাসান জেদ্দা যাওয়ার জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সে এসভি ৮৮১ ফ্লাইটে তিনি জেদ্দা যাবেন। জাহিদ হাসানের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের কালিকাপুরে। বিমানবন্দরে তার বাবা হারুন অর রশীদ আসেন ছেলেকে বিদায় জানাতে। দুই নম্বর গেটের বাইরে চেয়ারে বসে বাবার সঙ্গে কথা বলছিলেন প্রবাসী জাহিদ।

এ সময় দুই নম্বর গেটে দায়িত্বরত আর্মড পুলিশের একজন নারী সদস্য যাত্রী ব্যতীত অন্যদের টার্মিনালের ড্রাইভওয়ে থেকে চলে যেতে বলেন। আর্মড পুলিশের নারী সদস্যকে প্রবাসী জাহিদ হাসান তার বাবাকে আরও কিছু সময় থাকার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করেন। তবে প্রবাসী জাহিদের অনুরোধে মন গলেনি আর্মড পুলিশের। তাকে ধমকানো শুরু করেন সেই নারী পুলিশ সদস্য। দেশের ত্যাগের মুহূর্তে বাবার সামনে পুলিশ সদস্যের এমন আচরণে হতবাক হয়ে পড়েন জাহিদ হাসান। তিনি পুলিশ সদস্যের আচরণের প্রতিবাদ জানান। সেখানে আর্মড পুলিশের নারী সদস্য ক্ষিপ্ত হয়ে আরও উচ্চস্বরে ধমকাতে থাকেন। হইচই শুনে আর্মড পুলিশের অন্য সদস্যরা সেখানে এগিয়ে আসেন। যাত্রীকে শান্ত করার পরিবর্তে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তারাও। একপর্যায়ে আর্মড পুলিশের এস আই রহমতের নেতৃত্বে প্রায় ১৫ জন পুলিশ সদস্য মিলে প্রবাসী জাহিদ হাসানকে মারধর করতে থাকেন। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, প্রবাসী জাহিদ ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে চাইলেও আর্মড পুলিশ সদস্যরা তার হাত টেনে ধরে রাখেন। একজন আর্মড পুলিশ সদস্য তার হাত ধরে রাখেন, অন্যরা তাকে নির্মমভাবে মারতে থাকেন। পরবর্তীকালে সেদিনই সৌদি আরবে চলে যান প্রবাসী জাহিদ হাসান। দেশে না থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বিমানবন্দরে যাত্রীদের বিদায় জানাতে স্বজনদের আসতে কোনও নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।’

সৌদি প্রবাসী জাহিদ হাসানকে মারধরের ঘটনায় দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এগুলো অন্যায়। আমি অবশ্যই এপিবিএনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবো।’

এ প্রসঙ্গে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ জানিয়েছে, ২৪ মার্চ সকাল আনুমানিক ১০টার সময় এয়ারপোর্ট এপিবিএনের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অতিরিক্ত সহযাত্রী এবং অনাহুত বহিরাগত ব্যক্তিদের সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বহির্গমন টার্মিনালের ড্রাইভওয়েতে সুইপিং করার সময় জাহিদ হাসান নামক একজন যাত্রীর সঙ্গে এপিবিএন সদস্যদের অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তর্কাতর্কির সূত্রপাত হয়। এক পর্যায়ে যাত্রী উত্তেজিত হয়ে পড়লে এপিবিএন সদস্যরা তাকে নিবৃত করতে গেলে ধাক্কাধাক্কি হয়। এমতাবস্থায় ডিউটি অফিসার উক্ত যাত্রীর সঙ্গে ঘটনাটির বিষয়ে কথা বলেন এবং যাত্রীর অভিযোগ গ্রহণ করেন। এপিবিএন কর্তৃক পরিচালিত প্রাথমিক তদন্তে এই ঘটনায় অপেশাদার আচরণ করার জন্য জড়িত এপিবিএন সদস্যদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর বিশেষ প্রতিবেদন প্রদান করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে প্রাপ্ত উপস্থিত এপিবিএন সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।