নারী উদ্যোক্তার মামলা না নেওয়ার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে  

রাজধানীর ধানমন্ডির লেকসার্কাস এলাকার এক নারী উদ্যোক্তার মামলা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কলাবাগান থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। নারী উদ্যোক্তা কাকলী খান বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এ অভিযোগ করেন। তবে কী কারণে মামলা নেওয়া হয়নি সেটাও জানিয়েছে পুলিশ।

কাকলী খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শ্বশুবাড়ির লোকজনের কাছে বিয়ের স্বীকৃতি পেতে গিয়ে বহিরাগত লোকজনের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। সেই নির্যাতনের অভিযোগে থানায় মামলা করতে গেলে সেটা আমলে নেয়নি পুলিশ। গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে এ ঘটনা ঘটে।

কাকলী খান বলেন, আবসাল শাকিব কোরেশির সঙ্গে তার বিয়ে হয় ২০২১ সালে। বিয়ের পর থেকে তার স্বামী পরিবারের কাছে নিচ্ছিল না তাকে। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে তার পরিচয় লুকিয়ে রাখছিল। তিনি তার প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স না দিয়েই তাকে বিয়ে করেন। বিষয়টি যখন তিনি জানতে পারেন, তখন তিনি পাঁচ মাসের অন্তঃস্বত্তা। বর্তমানে বাচ্চার বয়স ২১ মাস। এর মধ্যে শাকিবের মা বিয়ের বিষয়ে জানতে পারে ছেলেকে বলেন তাকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য। 

তিনি বলেন, এরমধ্যে জানতে পারি স্বামী আবসাল শাকিব কোরেশি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে, তার মাও চলে যাচ্ছে। এই খবর পেয়ে গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে ৮৫ নম্বর ধানমন্ডির লেক সার্কাস বাসায় যাই আমার ও আমার বাচ্চার অধিকার পাওয়ার জন্য। যেখানে আমার শ্বশুর ও আমার স্বামী থাকতেন। আমার শ্বশুর এখন বেঁচে নেই। ওই বাসায় বাচ্চাকে নিয়ে গেলে রাতেই শাশুড়ির চিকিৎসার কথা বলে বাসাটির সামনের ফটক বাদে সব কক্ষ বন্ধ করে দিয়ে শাশুড়ি বের হয়ে যান। এর আগে আমি বাসায় যাওয়ার কারণে শ্বাশুড়ি ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশ ডেকে এনে আমাকে বাসা থেকে বের করার চেষ্টা করে।

তিনি আরও বলেন, কাগজে আমি তার ছেলের স্ত্রী প্রমাণিত হওয়ায় তখন আমাকে বের করতে ব্যর্থ হয়। ওই সময় পুলিশ সদস্যরা বিষয়টি পারিবারিকভাবে মীমাংসা করার পরামর্শ দিয়ে যান। কোনও উপায় না পেয়ে রাতে ওই বাসায় আমি রয়ে যাই। বিষয়টি নিয়ে রাতেই আমার বড় ভাই কলাবাগান থানায় জিডি করতে গেলে কলাবাগান থানা পুলিশ আমার ভাইয়ের জিডি নেয়নি বরং এর কিছুক্ষণ পর কলাবাগান থানা পুলিশ আমাকে ওই বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।

পরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে চাচা শ্বশুর ড. আলী আশকার কোরেশি, স্বামী আবসাল শাকিব কোরেশি, তার দুলাভাই হোসাইন টুটুল এবং চাচা শশুর আলী আশকার কোরেশি তাকে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ করেন।

মামলা না নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএমপির কলাবাগান থানার ওসি মোফিজুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কাকলি খান নামে ওই নারী জোর করে ওই বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন। বাড়িটি তার শ্বাশুড়ির না। তিনি ভুল জায়গায় উঠেছিলেন। দুই পক্ষের কাছে থেকে এ ঘটনা সম্পর্কে আমরা মৌখিকভাবে জেনেছি। এজন্য কোনও মামলা বা জিডি নেওয়া হয়নি।

মামলা না নেওয়ার বিষয়ে আইন কি বলে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল‍্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যে কেউ প্রয়োজনে মামলা বা জিডি করার অধিকার রাখেন। তবে এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে যে, ওই মামলা বা জিডিকে পুঁজি করে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে কাউকে যেনও ফাঁসাতে না পারে। সেটিও পুলিশকে দেখতে হয়। কারণ কিছু কিছু সময় এমনটা দেখা গেছে। তবে আগেই কাউকে দোষী বলে মামলা না নেওয়ার বিষয়টিও ঠিক নয়।