এনআইডি কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা, গ্রেফতার ৬

এনআইডি কর্মকর্তা সেজে প্রতারণার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সাইবার সেলে আসা অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো সাইফুল ইসলাম ওরফে সোহেল (৩০), মো. তারেক (৩১), মো. সবুজ মিয়া (২৬), টিপু সুলতান (৪১), মো. রিয়াজ খান (২৬) ও মো. শামসুল করিমকে (৪১) গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছয়টি মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল সিমকার্ড জব্দ করা হয়।

সিআইডির মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়, দেশের সাইবার স্পেসে সংঘটিত অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে সাইবার সংক্রান্ত যেকোনও অভিযোগ গ্রহণ করে সিআইডি। তারই ধারাবাহিকতায় জাল, ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির বিষয়ে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে একটি প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করে সাইবার টিম। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের সহায়তায় ভুয়া জন্মসনদ, এনআইডি ও পাসপোর্ট পাচ্ছে রোহিঙ্গা ও দাগি আসামিরা। চট্টগ্রামের কৃষক ওমর ফারুককে টার্গেট করে তার এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করে দালাল চক্রের সদস্যরা। পরে তার ছবি, ঠিকানা ও এনআইডি কার্ড ব্যবহার করে কক্সবাজারে থাকা ওমর ফারুক নামে এক রোহিঙ্গার পাসপোর্ট তৈরি করে বিপুল পরিমাণের অর্থ হাতিয়ে নেয় চক্রটি। দাগি অপরাধী ও রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট শক্তিশালী প্রতারক চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য পাওয়া যায়।

তারা আরও জানায়, ওমর ফারুকের মতো সাধারণ মানুষের এনআইডি কার্ড সংগ্রহে সক্রিয় রয়েছে দালাল চক্র। সংগ্রহের পর অন্যজনের নামে অবৈধভাবে তৈরি করা হয় এনআইডি কার্ড। এ চক্রটি ভুয়া এনআইডি তৈরি করে বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ব্যাংক ঋণ পেতে সহায়তা করতো। ভুয়া এনআইডি তৈরির মাধ্যমে প্রবাসে থাকা এমন অনেক ব্যক্তির অজান্তেই নিজের পৈতৃক ভিটেমাটি অন্য ভাই-বোনের নামে রেজিস্ট্রি হয়ে থাকতো। নতুনভাবে নিবন্ধিত ভোটারদের কাছে ফোন দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরিচয়ে অর্থ চাওয়া এবং গ্রহণ করা ছিল তাদের নিত্যদিনের কাজ। বায়োমেট্রিক আপলোড দ্রুত করার জন্য অর্থ গ্রহণসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নাম ব্যবহার করে সাধারণ সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থ সংগ্রহ করে প্রতারণা করতো।

প্রতারক চক্রটি সাধারণ আবেদনকারীদের কাছ থেকে অধিক টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স কমানোসহ এনআইডির যাবতীয় সংশোধনের (যেমন নাম ও ঠিকানা, বয়স পরিবর্তন) কাজ করে আসছে।

আবেদনকারীদের কাছে থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স কমানোর জন্য আবেদনকারীকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিতো। কতিপয় আবেদনকারী তাদের প্রকৃত বয়স কমিয়ে অবৈধভাবে জন্মনিবন্ধন সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করার জন্য আসামিদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যম হয়ে যোগাযোগ করতো। নির্বাচন কমিশন অফিসে কর্মরত অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় আবেদনকারীদের প্রকৃত বয়স কমিয়ে অবৈধভাবে জন্মনিবন্ধন সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করার জন্য তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণে টাকা গ্রহণ করতো।

এ কাজে প্রতারক চক্র তিনটি পর্যায়ে কাজ করে। ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করে সেটি দিয়ে এনআইডি কার্ড করা হয়। আর সেটি দিয়ে অবৈধভাবে তৈরি করা হচ্ছে রোহিঙ্গা নাগরিকসহ দাগি আসামিদের জন্য পাসপোর্ট। এই সক্রিয় চক্রটি রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র সার্ভারে ব্লক করা থাকলেও তারা আনব্লক করার জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা দাবি করত।

গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডি জানতে পারে, এনআইডি সংশোধনের অন্য প্রয়োজনীয় সব জাল ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে আবেদনের কপি নির্বাচন কমিশন অফিসে কর্মরত কতিপয় অসাধু-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করে আসছে। তারা লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে এমএফএস ব্যবহার করতো। চক্রটি নির্বাচন সচিবালয়ের স্বপদে থাকা বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে, বিশেষ করে তাদের ছুটির সময়ে সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন ভুক্তভোগীর এনআইডি তৈরি, সংশোধন করে দেওয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিতো।

এ ব্যাপারে শেরেবাংলা নগর থানারয় মামলা করা হয়েছে। এ ধরনের কোনও প্রতারণার শিকার হলে ০১৩২০০১০১৪৮ নম্বর ও cyber@police.gov.bd মেইলে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।