এনার্জি মাস্টার প্ল্যান সংশোধনের দাবি

ব্যয়বহুল প্রযুক্তি আর ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের এখনই সময়

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে হওয়া ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (আইইপিএমপি) বা সমন্বিত মহাপরিকল্পনা সংশোধন করে টেকসই ও জলবায়ুবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর মহাপরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশি জলবায়ু কর্মীরা।

১৯ এপ্রিল (শুক্রবার) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একটি র‍্যালি থেকে এ দাবি তুলে ধরেন তারা। তাদের হাতে থাকা ব্যানার ফেস্টুনে জ্বালানি খাতের রূপান্তর, জ্বালানি মহাপরিকল্পনা সংশোধন, নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা ও বিভিন্ন জ্বালানি নীতির সমন্বয়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের বিপদ, জলবায়ু অর্থায়ন ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নানান স্লোগান দেখা যায়।

তরুণ জলবায়ু কর্মীরা এনার্জি মাস্টার প্ল্যানে (আইইপিএমপি) থাকা সীমাবদ্ধতাগুলোর উপর আলোকপাত করে দ্রুত মহাপরিকল্পনাটি সংশোধন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

তাদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে দেওয়া এক বার্তায় বেসরকারি নীতি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “জাতীয় নবায়নযোগ্য শক্তি লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনায় বর্ণিত একটি টেকসই ভবিষ্যতের দিকে আমাদের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে, আইইপিএমপি সংশোধন করা অপরিহার্য।”

তরুণরাও নবায়নযোগ্য শক্তিকে প্রাধান্য দেওয়ার ব্যাপারে মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা ও অন্যান্য জাতীয় নীতিতে যা আছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি আইইপিএমপি বানানোর তাগিদ দেন।

গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকের অংশ হিসেবে ১৯ এপ্রিল (শুক্রবার) সারা বিশ্বেই বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আরও সোচ্চার হতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ধর্মঘট করেছে তরুণ-শিক্ষার্থীরা।

বৈশ্বিক পর্যায়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’-এর আন্দোলন ‘গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকের’ সাথে সমন্বয় করে ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’-এর বাংলাদেশ শাখা ও জলবায়ু সংগঠন ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস প্রেসক্লাবে এ কর্মসূচি করেছে।

“আমরা তরুণরা ভুয়া সমাধানগুলো প্রত্যাখ্যান করছি এবং জ্বালানি রূপান্তরনির্ভর মাস্টার প্ল্যান বানানোর পথে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, যে মহাপরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলো অগ্রাধিকার পাবে এবং যা সকলের জন্য একটি ন্যায্য রূপান্তর নিশ্চিত করবে,” বলেছেন ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান।

এই বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের পরিচালক অধ্যাপক ড. সামিয়া সেলিম বলেছেন, “জীবাশ্ম জ্বালানিতে অব্যাহত অর্থায়ন জলবায়ু অবিচারকে চিরস্থায়ী করছে, এতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো লাভবান হচ্ছে, আর দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ব্যাংক ও বিনিয়োগকারীদের জন্য এখনই সময় (জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে) সরে আসা এবং সবার জন্য জ্বালানি ব্যবস্থার ন্যায্য রূপান্তরকে অগ্রাধিকার দেওয়া, জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।”

কপ সম্মেলনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী `জলবায়ু ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠায় দূষণকারী উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে অর্থ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং সেজন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যাপ্ত অর্থের তহবিল গড়ে সেখান থেকে দ্রুত অর্থছাড়ের কৌশল বাস্তবায়নেরও আহ্বান এসেছে শুক্রবারের র্যালি থেকে।