রবিবার সকালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও পরিচালক মো. আহসান হাবীবের বাসার গৃহপরিচারিকা জনিয়ার (১৫) রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে কাফরুল থানা পুলিশ। বিআরটিএ’র পূর্বপাশের ৩ নম্বর ন্যাম গার্ডেন ভবনের পাশ থেকে ওই গৃহপরিচারিকার লাশ উদ্ধার করা হয়। কাফরুল থানার এসআই কামরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও পরিচালক মো. আহসান হাবীবের বাসায় নিহত জনিয়ার মা ফুলবানু কাজ করতেন।তিন চারদিন ধরে মায়ের পরিবর্তে ন্যাম গার্ডেনের ৪০৩ নম্বর ফ্লাটে জনিয়া কাজ করত। রবিবার সকাল সাড়ে ৭ টায় এক নারীকে নিয়ে ওই বাসায় যায় জনিয়া। জনিয়া ওই নারীকে ওই বাসাতে কাজে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল আহসান হাবীবের কাছে। কারণ, তার মা আর কাজ করবেন না। এসময় আহসান হাবীব তাদের পরে জানাবেন বলে জানিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। তিনি পরবর্তীতে অফিসে চলে যান।সকাল ৯ টার দিকে ওই বাড়ির সুপারভাইজার এমদাদ হক একটি শব্দ শুনতে পেয়ে বাসার পাশে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় জনিয়াকে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তিনি থানায় খবর দিলে কাফরুল থানার পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
তিনি সুরহতাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য রবিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠান। সোমবার সকালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ।
এরপর সোমবার সকালে নিহতের লাশ নিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়রা। তারা প্রথমে সকাল ১১ টার দিকে কাজীপাড়া বাসস্টান্ডে সড়ক অবরোধ করে। এরপর লাশ নিয়ে তারা কাফরুল থানা ঘেরাও করেন। সেখান থেকে ন্যাম গার্ডেনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন।পুলিশের উধ্বতন কর্মকর্তারা গিয়ে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।
জনিয়ার মা ফুল বানু রবিবার সকাল থেকেই পুলিশের কাছে অভিযোগ করে আসছিলেন, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর জনিয়ার বাবা ওসমান গণি ওই দিন রাতে কাফরুল থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে একটি ‘অপমৃত্যু মামলা’ নথিভুক্ত করে পুলিশ। তিনি অভিযোগ করেছেন, হত্যা মামলা করতে চাইলেও পুলিশ তার মামলা নেয়নি। ওসমান গণি বলেন, ‘আমি অশিক্ষিত মানুষ,কি মামলা করেছে আমি জানব কিভাবে? পরে শুনি তারা আমাদের কোনও অভিযোগ লেখেনি।’
সোমবার দুপুরের পর ওসমান গণি আবারও থানায় গিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ যুক্ত করে যুগ্ম সচিব ও তার স্ত্রী-ছেলের বিরুদ্ধে একটি সম্পূরক অভিযোগ করেন। তবে তার এই অভিযোগের ব্যাপারে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না পুলিশ। কারণ, পুলিশ নিজেই অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে।
ওসমান গণি বলেন, ‘মেয়েটিকে যখন উদ্ধার করা হয়,তখনই তার মুখ বাধা ছিল। আত্মহত্যা করলে কি কেউ মুখ বেধে থাকে। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম ছিল। পুলিশ তারপরও অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে।’
পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার মো. জাকির হোসেন সাংবাদিকদের জানান,এই ঘটনায় ওই ভবনের সুপারভাইজার ও তিন লিফটম্যানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই জানা যাবে এটি হত্যা কিনা?
নিহতের চাচাতো ভাই সোহেল জানান,জনিয়া খুব ছোট একটি মেয়ে। রবিবার সকালে ভালোভাবেই পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলে বাসা থেকে বের হয়।সে আত্মহত্যা করবে কেন? তাকে হত্যা করা হয়েছে।
কাফরুল থানার এসআই কামরুজ্জামান ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন,নিহত জনিয়ার স্যান্ডেল ছাদে পাওয়া গেছে। লাশের ময়নাতদন্তের পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। ছাদের উপরে লিফট অপারেটরের একটি কক্ষ রয়েছে। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ও বাসার সুপারভাইজার এমদাদকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও পরিচালক আহসান হাবীব,তার স্ত্রী এবং ছেলে রুম্মন (২৬) ওই বাসায় থাকেন বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
আহসান হাবীবের বরাত দিয়ে পুলিশ আরও জানায়, তার মা কাজ করবেন বলে কিছুদিন আগে তাদের পাওনা সব মটিয়ে দেওয়া হয়। রবিবার সকালে এক নারীকে নিয়ে জনিয়া কাজের জন্য এসেছিল। কিন্তু তিনি তাদের এ বিষয়ে পরে জানাবেন বলে জানিয়ে দিছেন। তারা ওই সময় চলে গেছে। এরপর কি হয়েছে তা আর তার জানা নেই।
/এআরআর/এমএসএম