বরাবরের মতো এবারও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বসেছে গরু-ছাগলের হাট। এসব হাটের বাইরেও পাড়ার রাস্তায় দাঁড়িয়ে চলছে ছাগল কেনাবেচা। রবিবার (১৬ জুন) বিকালে শহরের প্রধান সড়কের পাশেও ছাগল বিক্রি করতে দেখা গেছে। তুলনামূলক কম দামে ঘরের কাছে ছাগল কিনে অনেকেই তাদের স্বস্তির কথা জানিয়েছেন।
অনেকে বলছেন, কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ভেদাভেদ খানিকটা সমন্বয় করে দিয়েছে ছাগল।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ আশপাশের এলাকায় পাড়া-মহল্লায় গরু-ছাগল বিক্রি চলছে শুক্রবার (১৪ জুন) থেকেই। গরুর দাম নিয়ে পাড়া-মহল্লায় হাটে অভিযোগ থাকলেও ছাগলের দাম মাত্রা ছাড়ায়নি। এবার ছাগল উচ্চবিত্তের ও মধ্যবিত্তের যেমন প্রয়োজন মিটিয়েছে, তেমনি নিম্নবিত্তের সম্মান বাঁচাতে ছাগল ভূমিকা রেখেছে। অনেক পরিবার যাদের কোরবানি না দিলে সম্মান রাখা দায় তারা ছোট ছাগল কিনে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরেছেন। এমনটাই জানিয়েছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
মোহাম্মদপুরের নূর-এ আলম বলেন, যাদের গরু কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই, কিংবা ভাগে কোরবানি দেওয়ার সুযোগ পাননি অথবা সামর্থ্য নেই, তারা ছাগল কোরবানির জন্য কিনছেন। ধনী-গরিব সবার জন্যই ছাগল সুবিধা করে দিয়েছে।
মোহাম্মদপুরের জাফর আলী বলেন, ছোট ছাগল না থাকলে কোরবানি দেওয়া হতো না। আমার মতো অনেকেরই সম্মান বেঁচেছে। সামর্থ্য অনুযায়ী কিনতে পেরেছি।
সোসাইটির ৩ নম্বর রোডে ছাগল কিনতে আসা মোহাম্মদিয়া হাউজিং লিমিটেডের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ছাগল না থাকলে বিপদে পড়তাম। আমার গরুর ভাগ দেওয়ারও সামর্থ্য নেই। কিন্তু কেউ বুঝবে না। কোরবানি না দিলে পারিবারিকভাবে অসম্মানিত হবো। তাই ছাগল কিনতে এসেছিলাম। কিনেছি, এখন স্বস্তি লাগছে।
পাড়ামহল্লায় হাট হওয়ার চলাচলের কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে জাফর আলী বলেন, সমস্যা যা হচ্ছে তার চেয়ে সুবিধা বেশি। আজ রাতের পর তো আর সামান্য এই সমস্যা থাকবে না। রবং গরিব মানুষের জন্য ভালো। যারা ছোট গরু কিনছেন, যাদের লোক কম, তারাও দাম-দর করে যেমন কিনতে পারছেন, আবার সহজেই বাড়িতে নেওয়া যাচ্ছে।
গরু-ছাগলের দাম ওঠানামা করেছে কিনা জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা জানান, শনিবার (১৫ জুন) দুপুর থেকে মোহাম্মদপুরের টাউন হল, সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের গলি, মোহাম্মদি হাউজিংয়ের ৩ নম্বর রোড বাজারে ছাগলের দাম ওঠানামা করেছে।
সোসাইটির ৩ নম্বর রোডে দিনাজপুর থেকে ছাগল বিক্রি করতে আসা আলমগীর ব্যাপারী বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় ছাগলের দাম ঠিক (স্বাভাবিক) ছিল। সবাই কিনেছে। তবে হাটের ছাগল কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছিল। আজ রবিবার (১৬ জুন) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দাম ওঠানামা করেনি। তবে দাম কিছুটা কম মনে হচ্ছে।
বড় ছাগলগুলো কারা কিনছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড়লোকরা গরু কিনেছেন, আবার এখন বড় ছাগল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেক অবস্থাসম্পন্ন মানুষ ছোট ছাগলও কিনছেন। আর ছোট ছাগল বেশি কিনছেন গরিব মানুষ।
‘ঢাকার গরিব মানুষ’ বলে হেসে তিনি দিয়ে বলেন, ‘ঢাকার কেউ গরিব না।’
টাউন হল বাজারে ছাগল বিক্রি করতে এসেছেন রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার রাজ্জাক ব্যাপারী। লাভ কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে বলেন, ছাগলপ্রতি এক থেকে তিন হাজার টাকা লাভ হয়েছে। আবার কোনোটায় সমান সমান। আবার দু-একটিতে লোকসান হয়েছে। এবার কত লাভ হবে এখনও হিসাব করিনি। হাতেরটা বিক্রি হলে হিসাব করবো। ছাগলের দাম এবার কিছু বেশি। গত বছর লাভ একটু বেশি করেছি। এবার বেশি গত বছরের মতো লাভ হবে না।
ছবি: প্রতিবেদক