বাসেত - তাজুল - রুহুল এরাও বৃক্ষমানব !

বাসেত, রুহুল ও তাজুল- এরাও বৃক্ষমানব কীনা নিশ্চিত করতে পরীক্ষা নীরিক্ষা চলছেপঞ্চাশ বছরের মোহাম্মদ বাসেত আলী, পয়তাল্লিশ বছরের তাজুল ইসলাম এবং তার শিশুপুত্র আট বছরের রুহুল আমীন।এই তিনজনই বর্তমানে রয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।গত বুধবার রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে তারা এখানে এসেছেন উন্নত চিকিৎসার আশায়।এই তিন ব্যক্তির ধারণা এবং অনেকেই মনে করছেন,তারাও হয়তো আবুল বাজানদারের মতো বৃক্ষমানব।কিন্তু চিকিৎসকরা জানালেন, তারা হয়তো বৃক্ষমানব নন।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তারা কথা বলেন বার্ন ইউনিটের ছয়তলায় অবস্থিত কেবিনে বসে।
এই তিনজনের হাতে এবং পায়ে রয়েছে জমাট বাঁধা মাংসপিণ্ড, হাত পায়ের নখগুলো বড় বড়,শক্ত হয়ে আছে। অনেকেই মনে করছেন, তারাও বৃক্ষমানব আবুল বাজানদারের মতো ইপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভ্যারুসিফরমিস রোগে আক্রান্ত। তবে চিকিৎসকরা জানালেন, তারা  এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন এ বিষয়ে।
বড়ভাই মোহাম্মদ বাসেত আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা মায়ের গর্ভ থেকে পরছি পরেই আমাদের এ অবস্থা। তারপরে কোনওখানে চিকিৎসা হয় নাই। না হওয়ার শর্তে আমি রংপুরে দুই পাও কাটি আইছি। হাতের মতও পাও ছিল, কিন্তু জ্বালা পোড়া-বিষব্যাথা, অসহ্যতার কারণে দেড়-দুই বছর আগি পাও কাটাইছি।’
এখন কীভাবে সংসার চলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাস্তার ওপর স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ডে বইসা বইসা থাকি,মানুষির কাছে পয়সা-কড়ি ভিক্ষা করি খাই।’
নিঃসন্তান মানুষটির সব কাজই করে দেন স্ত্রী জায়েদা খাতুন। জায়েদা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সব কাজ আমি করে দেই, তাতেও কোনও কষ্ট হই না, কিন্তু বুড়া এই মানুষটা যখন ব্যাথায় চিৎকার দেয় তখন খুব কষ্ট হয়।’
বাসেত আলী বলেন, ‘খুব দুর্ভাগ্য আমাদের। অনেক কষ্ট করি আমাদের দিন রাত কাটা যায়। এই মনে করেন, না পারি একটু খাইতে, না পারি একটু ঘুমাইতে, যার ফলে ঘুম নাই, খাওয়া দাওয়া করতে পারি না, অতি কষ্টে আমাদের দিন যায়।’
জায়গা জমি আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘কিছুই নাই। আমাদের কিছুই নাই। কোনও রকমভাবে পাঁচটা টিনের একটা খাপড়া দিয়ে আমরা থাকি।’
জানালেন, ‘কয়েকদিন আগে রংপুরের কয়েকজন অফিসার, ডাক্তাররা আমাকে বলে, আপনাদের এ রোগের চিকিৎসাপাতি হচ্ছে, পীরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমাকে ডাকলো। আমাদের বললো, আপানাদেরতো টাকা পয়সা কিছু নাই, আমরা আপনাকে ঢাকা যাওয়ার জন্য টাকা পয়সা দিবো, এখন ঢাকায় চইলা যান ছয়তলা হাসপাতালে।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে।

মেজভাই তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা জন্ম থেকেই এরকম, কোনও কাজ করতে পারি না। আমার বাবা ছিল এইরকম।দুই ভাই এইরকম হইছি, আর দুই বোন এক ভাই ভালো, আমাদের মতো না।আবার আমার তিন ছেলের মধ্যে দুই জন ভালো তবে মেজ ছেলেটা আমার রোগে ভুইগতেছে।ভিক্ষা করি খাই, কাজ করার সামর্থ্য নাই, তাইলেতো ভিক্ষা করিই খাতি হবে বলেন তাজুল ইসলাম।

সরকারের কাছে দাবি, আমরা যেন চিরজীবন বসি খাইতি পারি, কোনও কর্ম করতি পারি না, কিন্তু বাঁইচেতো আছি।পেটেতো ক্ষিধা লাগে.পাথরতো আর বানতি পারি না।খুব গরীব মানুষ, চলাফেরাই করতি পারি না, কী করি খাবো। আলু তুলে, শাক কচু তুলে বউ ছেলেরা খাওয়ায়।

রুহুল আমীন জানালো, সে স্কুলে ভর্তি হয়েছে কিন্তু কেউ তার সঙ্গে কথা বলেনা, মিশে না, কিন্তু আমি স্কুলে যাইতি চাই, লিখাপড়া করতি চাই, বড় দুই ভাইয়ের মতো।

এদিকে নতুন এ তিন রোগী সম্পর্কে বার্ন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. সামন্ত লাল সেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে।তবে আবুল বাজানদারের মতো তাদের অবস্থা অতো জটিল নয়।পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলে তখন বিষয়টা পরিষ্কার করে বলা যাবে, তবে তার (আবুল বাজানদার) মতো এদের অবস্থা ক্রিটিক্যাল নয়।

এপিএইচ/