এপিসি থেকে ফেলে দেওয়া ইয়ামিনের মৃত্যু

শেখ হাসিনাসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সাভারে গুলিবিদ্ধ হন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন। তাকে পুলিশের সাঁজোয়া যানে (এপিসি) তুলে পরে আবার সেখান থেকে রাস্তায় ফেলে দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই ইয়ামিনকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭৮ জনের নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) চিফ প্রসিকিউর বরাবর এ অভিযোগ দাখিল করেন নিহতের মামা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মুন কাদির।

অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৮ জুলাই পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে। তারা শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনকে ধরে টেনে পুলিশের সাঁজোয়া যানের কাছে নিয়ে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে বুকের বামপাশে গুলি করে। ইয়ামিনের বুকের বামপাশে অসংখ্য স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়।

এমতাবস্থায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ইয়ামিনকে টেনে পুলিশের সাঁজোয়া যানের ওপরে ফেলে রাখে। আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য তারা গাড়িটি এপাশ থেকে ওপাশ প্রদক্ষিণ করতে থাকে। পরে ইয়ামিনকে প্রায় মৃত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে দেয় এবং সাঁজোয়া যানের ভেতর থেকে এক পুলিশ সদস্যকে বের করে তার পায়ে পুনরায় গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই পুলিশ সদস্য ইয়ামিনকে মৃত ভেবে পায়ে গুলি না করে রাস্তার ওপরের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে টেনে নিয়ে রোড ডিভাইডারের পাশে ফেলে দেয়।

গুলিবিদ্ধ ইয়ামিনকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রচণ্ড কষ্টে নিশ্বাস নিতে তখনও দেখা যায়। এমতাবস্থায় পুলিশ সদস্যরা ধরাধরি করে উঁচু রোড ডিভাইডারের একপাশ থেকে আরেক পাশ ছুড়ে ফেলে দেয়। পরে তাকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কোনও ধরনের ময়নাতদন্ত না করে এবং তৎক্ষণাৎ কোনও মৃত্যুর সনদ না দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইয়ামিনের মরদেহ হস্তান্তর করে। এ সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছাত্র-জনতা প্রতিবাদ করিলেও পুলিশ বাহিনী ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার লোকজন ছাত্র-জনতাকে হাসপাতাল ত্যাগে বাধ্য করে । ইয়ামিন এর পরিবারের কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে বা সংবাদ মাধ্যমে তথ্য দিতে বারণ এবং মামলা না করার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন পুলিশের ঢাকা ও সাভার রেঞ্জের  ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। উদ্ভূত বিশেষ পরিস্থিতিতে ইয়ামিনের পরিবার তাকে সাভার ব্যাংক টাউন কবরস্থানে দাফন করেন।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, গত ১৮ জুলাই সাভারে এপিসি থেকে গুলি করে একটি ছেলেকে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে দেয়। তিনি এমআইএসটি এর ছাত্র। হাসপাতালে নেওয়ার পর সে মৃত্যুবরণ করে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করতে দেয়নি। তার মামা প্রধানমন্ত্রীসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছেন।

ফলে গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে ভারতে অবস্থান করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আজকেরটিসহ  মোট ৩০টি পৃথক অভিযোগ দায়ের করা হলো। এর মধ্যে ১২টি চিফ প্রসিকিউটর বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো তদন্ত সংস্থায় দাখিল করা হয়েছে।