সুপারশপে পলিথিনের বিকল্প শপিং ব্যাগের ব্যবহার শুরু 

দেশের সব সুপারশপে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) থেকে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ। অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গত ৯ সেপ্টেম্বর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। প্রাথমিকভাবে পলিথিনের শপিং ব্যাগ এবং পলিপ্রপাইলিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আজ থেকে এসব ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাটের সুতা দিয়ে তৈরি ব্যাগের ব্যবহার শুরু করেছে দেশের সুপারশপগুলো। 

নতুন এই উদ্যোগকে সফল করতে মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় দুটি সুপারশপ পরিদর্শন করেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। প্রথমে তিনি যান সাতমসজিদ রোডে অবস্থিত আগোরা সুপারশপে। সেখানে দেখা গেছে, সুতা দিয়ে তৈরি ব্যাগ গ্রাহকদের জন্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। সাইজ অনুযায়ী প্রতিটি ব্যাগের মূল্য রাখা হচ্ছে ২০-৩০ টাকা। এ সময় উপদেষ্টা শপ ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরিবেশবান্ধব ব্যাগের ব্যবহারের ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি এই উদ্যোগ সম্পর্কে ক্রেতাদের মনোভাব জানতে চান। সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান ক্রেতারা। 

আগোরা সুপারশপ পরিদর্শ করেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

আগোরা সুপারশপের স্টোর ম্যানেজার মো. আমিনুল ইসলাম জানান, পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। এটি আরও অনেক আগে করা দরকার ছিল।

আগোরা সুপারশপ পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘যতদিন পুরোপুরিভাবে পলিথিনের শপিং ব্যাগ উৎপাদন বন্ধ না হয়, ততদিন পর্যন্ত অভিযান চলবে।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞার বাস্তব প্রয়োগ শুরু করেছি। একবার বছর দুয়েকের জন্য প্রয়োগ হয়েছিল। মার্কেট মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পলিথিন প্রায় উঠে গিয়েছিল। তারপর আর মনিটরিং ছিল না, এটা আবার ফেরত এসেছে।’

সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, ‘সুপার শপের মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা খুশি মনে পাটের ব্যাগের ব্যবহার করতে রাজি হয়েছেন। কারণ পলিথিনের বিপদটা তারা বোঝেন। নিজেদের সন্তানদের জন্য এটা একটা ভালো কাজ।’

মীনা বাজারে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে স্বাগত জানান কাজী ইনাম আহমেদ। ছবি: নাসিরুল ইসলাম

এরপর উপদেষ্টা ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের মীনা বাজারের আউটলেট পরিদর্শন করেন। এ সময় জেমকন গ্রুপের পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদ তাকে স্বাগত জানান। মীনা বাজারের বিভিন্ন সেকশন ঘুরে দেখেন উপদেষ্টা। এ সময় কাজী ইনাম আহমেদ ক্রেতাদের সুবিধার্থে নেওয়া মীনা বাজারের বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে উপদেষ্টাকে অবহিত করেন।

মীনা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেনাকাটা করছেন এবং নতুন এই ব্যবস্থা সম্পর্কে কৌতূহল প্রকাশ করছেন। মীনা বাজারের নিয়মিত ক্রেতা শায়লা আক্তার জানান, সরকারের এই উদ্যোগ বেশ ভালো। দেশের বাইরেও এ রকম ব্যব্স্থা দেখেছি। তবে আমাদের অনেকেই ব্যাগ টাকা দিয়ে কিনে ব্যবহারে অভ্যস্ত না। এটির সুফল পেতে মনে হয় একটু সময় লাগবে।

মীনা বাজারে চার ধরনের পাটের ব্যাগ ক্রেতাদের জন্য রাখা হয়েছে। এসব ব্যাগের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে সাইজ ভেদে ১৩ থেকে ১৯ টাকা। এছাড়া মাছ-মাংস দেওয়া হচ্ছে কাগজের প্যাকেটে। 

পরিবেশবান্ধব ব্যাগ কেনায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন ক্রেতারাও

মীনা বাজারের ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন ম্যানেজার তাসনিম হোসাইন বলেন, ‘আমরা আগে ক্রেতাদের পণ্য দেওয়ার জন্য ওভেন ব্যাগ ব্যবহার করতাম। ১৫-১৬ দিন আগে বর্তমান সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আমরা সেটি পরিবর্তন করে পাট ও কাগজের ব্যাগ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা আজ থেকে পুরোপুরি শুরু হয়েছে।’

তাসনিম হোসাইন বলেন, ‘আমরা ক্রেতাদের পণ্য বহনের জন্য পাট ও কাগজের ব্যাগ দিচ্ছি। মাছ-মাংসের মতো ভেজা পণ্য এসব ব্যাগে দেওয়ার আগে এক ধরনের মোম দিয়ে পলিস করা কাগজে মুড়িয়ে দিচ্ছি। যাতে পানি না পড়ে।’

মীনা বাজার পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের দেশের আইনে পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও ক্রয় একেবারে নিষিদ্ধ। কিন্তু এটা কেউ মানে না। অন্যান্য দেশের দিকে তাকালে দেখবেন, পলিথিনের ব্যাগকে সবার আগে টার্গেট করে বাজার থেকে সরানো হয়েছে। আমাদের দেশে সবার আগে আইন করে নিষিদ্ধ করা হলেও বাস্তবায়ন করা হয়নি। এখানে আমরা সুপারশপ দিয়ে বাস্তবায়ন শুরু করলাম।’ 

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর বিধান অনুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০২ সালের ১ মার্চ সরকার বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সে সময় শর্তসাপেক্ষে সব রকমের পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি, মজুদ ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে পরিবেশ অধিদফতর।