অষ্টমীতে সাড়ম্বরে কুমারী পূজা উদযাপিত

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজার অষ্টমী আজ। এদিন সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো কুমারী পূজা। কুমারী বালিকার মধ্যে বিশুদ্ধ নারীর রূপ কল্পনা করে তাকে দেবী জ্ঞানে পূজা করেন ভক্তরা। এবার কুমারী পূজায় ছিল ভক্তদের উপচে পড়া ভিড়।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে আড়ম্বরপূর্ণ ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

462546706_846369100992368_4405626234285528460_nবেলা সাড়ে ১০টায় শুরু করা হয় কুমারী পূজা। শেষ হয় বেলা ১টায়। অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস– এই পাঁচ উপকরণে দেওয়া হয় কুমারী মায়ের পূজা। অর্ঘ্য দেওয়ার পর দেবীর গলায় পরানো হয় পুষ্পমাল্য। এরপর পুষ্পাঞ্জলি এবং প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

এবারের মাতৃরূপী দেবী দুর্গার শাস্ত্রীয় নাম পূঞ্জিকা আর জীবন্ত রূপের নাম সংহিতা ভট্টাচার্য। বয়স ৮ বছর। দুর্গা পূজার পঞ্চম তিথিতে তার জন্ম।

462543029_1046620290302259_3611455425329608452_nএরআগে স্নান করিয়ে ঝকঝকে শাড়ি, ফুলের মালা, মুকুট, পায়ে আলতা, কপালে টিপ ইত্যাদি পরিয়ে সাজিয়ে তৈরি করা হয় কুমারী মাকে।

রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে এদিন ছিল হাজার অনুরাগীর ঢল। পূজা মণ্ডপে ঢাকের বাদ্য, কাঁসরঘণ্টা, শঙ্খের আওয়াজ আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হয় পুরো প্রাঙ্গণ।

রাজধানীর নারিন্দা থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে কুমারী পূজায় আসা তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র অপর্ণা দেবনাথ বলেন, 'কুমারী পূজায় কুমারী রূপে মা দুর্গার আরাধনা করা হয়। আমি প্রতিবছর কুমারী পূজায় আসি। এবারও ভোর বেলা এসেছি বাবা-মায়ের সঙ্গে।'

462177816_561338276461182_1397809371512206771_nঅপর্ণার বাবা রুদ্র দেবনাথ বলেন, 'হিন্দুশাস্ত্র মতে, কুমারী মেয়েদের মনে করা হয় সর্ববিদ্যাস্বরূপিণী। এই পূজার মধ্যে দিয়ে নারীদের সম্মান জানানো হয়। ঢাকাতে রামকৃষ্ণ মিশনেই একমাত্র কুমারী পূজা হয়। তাই প্রতিবছর মেয়েকে নিয়ে এখানে আসি।’

হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত এক থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা ব্রাহ্মণ বা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কুমারী নারীকে দেবী জ্ঞানে পূজা করা হয়। শ্রীরাম কৃষ্ণের কথামতে, কুমারী পূজার বিষয়ে বলা হয়েছে— শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর রূপ বেশি প্রকাশ পায় এবং মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার উদ্দেশ্য।

শাস্ত্রমতে, এক বছর বয়সী কন্যাকে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কলিকা, পাঁচে সুভাগা, ছয়ে উমা, সাতে মালনী, আটে কুজ্বিকা, নয়ে কালসন্দর্ভা, দশে অপরাজিতা, এগারোতে রুদ্রানী, বারোতে ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দতে পীঠ নায়িকা, পনেরোতে ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোলো বছরে তাকে অন্নদা নামে অভিহিত করা হয়।

462035850_1667652580447401_3596496044344667842_n

462386318_1078434933799615_7936606243084767252_n

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন