কারাগারে চিকিৎসা নিয়ে আদালতে অভিযোগ করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তার এ বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।
রবিবার (২০ অক্টোবর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আলী হায়দারের আদালতে শাহরিয়ার কবিরের রিমান্ড শুনানিতে এ ঘটনা ঘটে।
আদালত বিচারকের অনুমতি নিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমি এর আগে রিমান্ডে গিয়েছি। হুইলচেয়ার ছাড়া হাঁটতে পারি না। আমার পায়ে সমস্যা রয়েছে। মামলার বিষয়ে আমি কিছুই বলতে চাই না। তবে সঠিকভাবে আমার চিকিৎসার প্রয়োজন। গত চার মাস ধরে আমি অসুস্থ। আমি এখনও চিকিৎসার জন্য কারা হাসপাতালে রয়েছি। কাশিমপুর কারাগারে আমার ট্রিটমেন্ট হচ্ছে না। আমি সর্দি, কাশি, জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত। আমার ভালো ট্রিটমেন্টের জন্য একটু পুলিশ সুপারকে বলে দিতেন, তাহলে ভালো হতো। যদিও আইনজীবী এই বিষয়ে বলেছেন।’
এসময় এক বিএনপিপন্থি আইনজীবী চিৎকার করে বলেন, ‘অনেক বলেছেন, আর না। থামেন এবার থামেন।’
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘যখন বাইরে কোনও মিছিলে তাকে দেখি, তখন তিনি সুস্থ থাকেন। আদালতে আসলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এগুলো সব তালবাহানা।’
এসময় শাহরিয়ার কবির রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘গত চার মাস আমাকে বাইরে কোথায় দেখেছেন। কোনও ছবি বা ভিডিও দেখাতে পারবেন?’ এই প্রশ্নে জবাব দেননি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
এরপর বিচারক দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে কারাবিধি অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা বলেন।
এর আগে আদালতে রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষের শুনানি করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী শ্রী প্রাণ নাথ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন শুনানি করেন।
প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষে ওমর ফারুক ফারুকী শুনানি বলেন, ‘শাহরিয়ার কবির এজাহারভুক্ত ৩৯ নম্বর আসামি। আসামিদের নির্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলি চালানো হয়৷ এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। নিহত হন যাত্রাবাড়ীতে রফিকুল ইসলাম নামে ওই ব্যক্তি। এই আসামি একজন নাস্তিক। মুসলমানদের বিরুদ্ধে উনি অনেক কথা বলেছেন। নাস্তিকরা আবার আওয়ামী লীগ সরকারকে পছন্দ করতেন। আওয়ামী লীগ সরকারও নাস্তিকদের ভরণ-পোষণ করে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তারা আবার রুখে দাঁড়াতেন। এই হত্যা মামলার সঙ্গে আসামি জড়িত রয়েছেন। মামলার তদন্তের স্বার্থে প্রকৃতি রহস্য উদঘাটনের জন্য আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।’
এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী শ্রী প্রাণ নাথ রিমান্ড বাতিল শুনানিতে বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে মামলায় সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ নেই। তিনি একজন শিক্ষক, কলামিস্ট। তিনি সারাজীবন শিক্ষকতা করেছেন। আসামির ভাগ্য খারাপ তিনি এর আগেও জেল খেটেছেন। এখন আবার যেতে হলো। আসামির হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, পায়ে রড লাগানো, অসুস্থ ব্যক্তি। যেহেতু তিনি অসুস্থ, তাই এই মামলার জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন হলে তাকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।’