দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। ইতোমধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বইছে শীতের হিমেল হাওয়া। রাজধানীতে শীতের আমেজ এখনও তেমন না থাকলেও শেষ রাতের শীতল আবহাওয়া গায়ে কাঁথা বা চাদর জড়াতে বাধ্য করছে। শীতের সঙ্গে বাড়ছে গরম কাপড়ের চাহিদা। রাজধানীর বড় দোকান থেকে শুরু করে ফুটপাতের দোকানেও চলে এসেছে শীতের পোশাক। সপ্তাহখানেক আগে থেকে বেচাবিক্রিও শুরু হয়েছে। শপিং মলে এখনও তেমন বেচাবিক্রি চোখে না পড়লেও ফুটপাতে শীতের কাপড়ের আগাম বেচাকেনা ভালোই চলছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নিম্নবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষেরাও শীতবস্ত্র কিনতে ফুটপাতের দোকানে ভিড় করছেন। শীতের জ্যাকেট, চাদর, গেঞ্জি, হুডি, মাফলার, পুরনো কমফোর্টার, হাতমোজা, কান-টুপিসহ সবধরনের শীতবস্ত্রই মিলছে এসব দোকানে। অনেক দোকানে আবার শুধুই শিশুদের শীতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে।
পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকায় ফুটপাতে শীতবস্ত্র বিক্রি করেন রিয়াদুল। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করেই সংসার চালাই। সামনে শীতের মৌসুম, তাই শীতবস্ত্র বিক্রি শুরু করেছি। গতবছরের অনেক শীতের কাপড় রয়ে গেছিল। এখন সেগুলো কম দামে বিক্রি করছি।
ফুটপাতে জমজমাট বেচাকেনা
পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে শুরু করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ পর্যন্ত ফুটপাতে জমে উঠেছে শীতের পোশাক বিক্রি। এছাড়াও গুলিস্তান, নিউ মার্কেটের পুরো এলাকা জুড়ে জমজমাট বিক্রি দেখা গেছে।
ফুটপাত থেকে সন্তানের জন্য শীতবস্ত্র কিনতে এসেছেন রাহিমা আক্তার নামের একজন গৃহিণী। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, শীত শুরুর আগেই বাচ্চাদের জন্য শীতের পোশাক নিয়ে নিচ্ছি। শীত বাড়লে আবার দাম বেড়ে যাবে। তাই আগেভাগেই কিনে ফেলছি। সাতশো টাকার মধ্যে তিন বাচ্চার শীতের পোশাক কিনে ফেলেছি।
ফুটপাত থেকে নিজের জন্য সোয়েটার কিনতে আসা মহিউদ্দিন নামে একজন রিকশাচালক বলেন, দিনে শীত না পড়লেও রাতে রিকশা চালাতে ঠান্ডা লাগে। তাই একটা সোয়েটার কিনতে এসেছি। কিন্তু দাম চাইছে তিনশ’ টাকা। দুইশ’ টাকা বলছি, কিন্তু দোকানদার কোনোভাবেই দিচ্ছে না।
ইতোমধ্যে বড় বড় বিপণিবিতান,শপিং মল ও ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে শীতের পোশাক আসলেও বেচাকেনা এখনও তেমন জমে উঠেনি। বিপণিবিতান ও শপিং মলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নভেম্বরের শুরুতেই শীতের পোশাক চলে এসেছে দোকানে। তবে শীতের পোশাক ক্রয়ে ক্রেতাদের তেমন আগ্রহ নেই।
পুরান ঢাকার গ্রেট ওয়াল শপিং মলের পোশাক বিক্রেতা আজহার আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ১৫-২০ দিন আগে শীতের পোশাক দোকানে এসেছে। কিন্তু বেচাকেনা হচ্ছে না। দিনে দুই-চারটা কাস্টমার পাই। তাও দামাদামি করে চলে যায়। গতবছরও বেচাকেনা তেমন ভালো হয়নি। প্রায় দশ লাখ টাকার মালামাল পড়ে ছিল। আশা করছি এবার ভালো বেচাকেনা হবে।
বড় বিপণিবিতান বা শপিং মলে বেচাকেনা তেমন দেখা না গেলেও ইজি ফ্যাশনের দোকানে গিয়ে ক্রেতাদের মোটামুটি ভালো উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। শাহরিয়ার আহমেদ নামে একজন ক্রেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অন্যান্য জায়গা থেকে চড়া মূল্যে কেনার চেয়ে ব্র্যান্ডের দোকানে একদামে পণ্য কেনাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এখানকার প্রোডাক্টগুলো মানসম্মত।
সদরঘাটের গ্রেট ওয়াল শপিং মল, লেডিস মার্কেট, গুলিস্তানের ট্রেড সেন্টারসহ বেশ কয়েকটি শপিং মলে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সব দোকানেই শীতের পোশাক চলে এসেছে। তবে বেচাবিক্রি তেমন না থাকায় অধিকাংশ বিক্রেতা অবসর সময় পার করছেন।
গুলিস্তানের ট্রেড সেন্টারের দোকানদার হাবিব বলেন, ব্যবসা করতে বরাবরই ধৈর্য দরকার। শীতের পোশাক আনছি, কিন্তু বিক্রি হচ্ছে না। কিন্তু ধৈর্য হারাচ্ছি না। কারণ আমরা জানি, শীত বাড়লে বিক্রি বাড়বে। এখন শীত কম পড়ছে। তাই দামও তুলনামূলক কম। তবে শীত বাড়লে দামও বাড়বে বলে জানান এই বিক্রেতা।