পঞ্চদশ সংশোধনীর রায় ঘোষণার পর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বললেন, ‘আমি গর্বিত’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা কয়েকটি বিষয় অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। যুগান্তকারী এ রায় প্রদানকারী হাইকোর্ট বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব। তার সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরী। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব রায়টি লিখেছেন এবং পুরো রায়টি আদালত কক্ষে ঘোষণা করেছেন। 

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রায় ঘোষণা শেষে পঞ্চদশ সংশোধনী মামলা সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের তিনি ধন্যবাদ জানান। 

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, এত বড় ও গুরুত্বপূর্ণ মামলা নিয়ে আপনারা একজন নারী বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এসেছিলেন। একজন নারী বিচারপতির ওপর আস্থা রেখেছেন, এ কারণে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এটা আমার জন্য বড় পাওয়া। এ রায় দিতে পেরে আমি গর্বিত। আমি মনে করি, নারী জাতির জন্য এটি গর্বের বিষয়। এ রায় দেওয়ার সময় আমরা জনগণের চাওয়া ও অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করেছি। 

পরে আইনজীবীরাও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ধন্যবাদ জানান।  

এর আগে বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলসহ বেশকিছু বিষয়ে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। দীর্ঘ ২৩ কার্যদিবস শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায়ের জন্য এ দিন ধার্য রেখেছিলেন। 

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন। রিটকারী সুজনের বদিউল আলমের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী। ইনসানিয়াত বিপ্লবের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান, চার আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী, ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। 

এর আগে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই সংশোধনীর দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এছাড়াও জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বিদ্যমান ৪৫-এর স্থলে ৫০ করা হয়। তবে চলতি বছরের ১৯ আগস্ট জনস্বার্থে পাঁচ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির করা রিট দায়ের করেন। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন। অন্য চারজন হলেন— তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। এরপর এ রুলের ওপর মতামত দিতে বিএনপি ও জামায়াত যুক্ত হয়। এছাড়াও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রিটে যুক্ত হন। অপরদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার দলটির পক্ষে রিটে যুক্ত হন। 

পরে রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে রুল জারি করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলসহ বেশকিছু বিষয়ে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরে আবেদনকারী পক্ষ রুলটি শুনানির জন্য বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন কোর্টে ‍উপস্থাপন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে রুলটির ওপর শুনানি শুরু হয়। 

আরও পড়ুন:

পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক অবৈধ: হাইকোর্ট