অদৃশ্য আতঙ্কে জোহার স্বজনরা

অদৃশ্য এক আতঙ্ক ঘিরে ধরেছেতানভীর হাসান জোহাস্বজনদের। নিখোঁজ হওয়ার পর তার স্বজনরা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে কয়েকটি থানায় ঘোরাঘুরি করেও ব্যর্থ হওয়ার পর তারা আর থানায় যাননি।জোহার নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ জানাতে শনিবার ভাষানটেক থানায় যাওয়ার কথা থাকলেও তারা যাননি। কেন যাননি তারা—এ বিষয়েও অজানা আতঙ্কে মুখ খুলতে চাননি কেউ।কেবল বলেছেন,‘আরও দুই-এক দিন দেখি’।
তানভির হাসান জোহার স্ত্রী ডা.কামরুন নাহার চৌধুরী শুধু সবার দোয়া চেয়েছেন। জোহা দেশের জন্য কাজ করেছেন। তার স্বামী যেন জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় ঘরে ফিরে আসতে পারেন,সেজন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার সহযোগিতা ও দোয়া চেয়েছেন তিনি। জোহার নিখোঁজের এত ঘণ্টা পরও তার কোনও সন্ধান না পাওয়াসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা না পেয়ে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। জোহার বৃদ্ধা মা মাকসুদা হাসান শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন। কারও সঙ্গেই তিনি কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না।
শনিবার সকালে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকের কাছে জোহার বিষয়ে জানতে চান উপস্থিত সাংবাদিকরা।এ সময় আইজিপি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা নিখোঁজের কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই। তবে, জোহার পরিবার পুলিশের কাছে সহযোগিতা চাইলে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ প্রধানের আশ্বাসের পরও থানায় কেন যাচ্ছেন না—জানতে চাইলে জোহার চাচা মাহবুবুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে কিছু বলতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত না যাওয়ার কোনও কারণ ব্যাখ্যা করেননি। তিনি বলেন,তারা আরও কিছু সময় নিতে চান। বুঝে-শুনেই তারা থানায় যাবেন। এখন তারা শুধু জিডি করবেন, নাকি মামলা করবেন—এ নিয়ে ভাবছেন তারা।
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন,জোহার কোনও তথ্য তার কাছে নেই। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করে থাকলে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। র‌্যাব ও মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারাও বলেছেন,তারাও জোহার খোঁজ পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু জোহার অবস্থান সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না।

বুধবার মধ্যরাতে রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকা থেকে অপহৃত হন তানভীর হাসান জোহা। রাত ১২টার দিকে স্ত্রী  ডা. কামরুন নাহারের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় তার। তখন জোহা জানিয়েছিলেন, তিনি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় ইয়ামির আহমেদ নামের এক বন্ধুসহ বাসায় ফিরছেন। রাত দেড়টার দিকে ওই বন্ধু ফোনে জোহার পরিবারকে জানান, জোহা অপহৃত হয়েছেন। এরপর থেকে জোহার কোনও সন্ধান পাচ্ছেন না তার পরিবারের সদস্যরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ডলার সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা তদন্তে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে তানভির হাসান জোহাকে চিঠি দিয়ে কমিটিতে নেওয়া হয়েছিল। কয়েকটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলেও নিখোঁজের আগে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছিলেন জোহা।অর্থ চুরি সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু প্রশ্ন তোলার কারণে তাকে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছিল বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। এরপরই হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান দেশের তরুণ এই তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ।

এমএসএম /এমএনএইচ/