৩০ বছর আগে রাজধানীর শাহজাহানপুরে হাকিম অটোমোবাইলস নামে গাড়ি মেরামতের একটি ওয়ার্কশপ খুলেছিলেন আব্দুল হাকিম। ১০ বছর পর প্রতিষ্ঠানটি সেখান থেকে স্থানান্তর করে নিয়ে আসেন খিলগাঁওয়ের তালতলা মার্কেট এলাকায়। টানা লেগে থাকার কারণে ব্যবসায় আলোর মুখ দেখেছিলেন তিনি। ৩ বছর আগে হঠাৎ মারা যান তিনি। তখন অর্ধশত কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় তার পরিবারের সদস্যরা। হাল না ছেড়ে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নেন তার স্ত্রী শিরিনা বেগম ও মেয়ে শারমিন আক্তার শিখা। কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে শত বাধা পেরিয়ে স্বামীর প্রতিষ্ঠানটি সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন শিরিনা। দীর্ঘদিনের পরিশ্রমে গড়া প্রতিষ্ঠানটি আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা এলাকার গ্যারেজপট্টিতে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এতে শুধু হাকিম অটোমোবাইলসই নয়, পুড়ে গেছে আরও ১৭ থেকে ১৮টি গ্যারেজ। অগ্নিকাণ্ডে ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে অনুমান ক্ষতিগ্রস্ত গ্যারেজ মালিক সমিতির। একই সঙ্গে শুক্রবার বন্ধের দিন ও গ্যারেজ মালিক সমিতির পিকনিক থাকায় এ অগ্নিকাণ্ডকে সন্দেহের চোখে দেখছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, গ্যারেজগুলোতে অক্সিজেনের সিলিন্ডার ছিল। আবার গাড়িতে থাকা গ্যাস সিলিন্ডারও ছিল। আগুনে সেগুলো বিস্ফোরিত হয়েছে বলে তাদের ধারণা।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে গেলে দেখা যায়, চারদিকে বিভিন্ন ধরনের পোড়া গাড়ি পড়ে আছে। দোকানের পোড়া টিন আর বিভিন্ন প্রকারের যন্ত্রাংশ জায়গায় জায়গায় পড়ে আছে। এছাড়া গ্যারেজের পাশে থাকা একটি স’ মিল ও সেখানে থাকা বেশ কিছু কাঠ পুড়ে গেছে আগুনে। আগুন থেকে বাঁচতে পারেনি আশেপাশের গাছপালাও। একের পর এক সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনের স্ফূলিঙ্গ অনেক উপরেও উঠে যায়।
হাকিম অটোমোবাইলসের স্বত্বাধিকারী শারমিন আক্তার শিখা বাংলা ট্রিবিউন বলেন, আমাদের এই ব্যবসা ৩০ বছরের। আজ আগুন আমাদের সব নিয়ে গেলো। আমরা পথে বসে গেছি। আমাদের গ্যারেজে যে কয়টি গাড়ি ছিল সব মিলিয়ে প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কর্মচারীদের বেতন দেবো বলে গতকাল (বৃহস্পতিবার) তিন লাখ টাকা নগদ রেখেছিলাম ক্যাশে। সব ছাই হয়ে গেছে। তিনি বলেন, কীভাবে এত বড় আগুন লাগলো কিছুই বুঝতেছি না। আর সমিতির পিকনিকের দিনেই কেন হবে এ ঘটনা। আমরা মনে করি, এটা পরিকল্পিত। আমরা চাই প্রশাসন যেন তদন্ত করে এর রহস্য বের করে আনে।
তিনি বলেন, আমরা গত ২০ বছর যাবত এখানে ব্যবসা করছি। বিভিন্ন সময়ে আমাদের মার্কেট বন্ধ থাকে। কিন্তু তখন কেউ না কেউ এখানে থাকতো। কোনোদিন সমস্যা হয়নি। কিন্তু কাল কেউ ছিল না, ঠিক এদিনটাতেই আগুন লাগলো। তিনি বলেন, এক পাশে প্রথম আগুন লাগে। সেই আগুন এত দ্রুত অন্য পাশে চলে আসাটা আশ্চর্যজনক লাগছে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে সব পুড়ে গেছে। আমাদের সন্দেহ হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাউদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গতকালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি জিডি করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ড কীভাবে হয়েছে, পরিকল্পিত না দুর্ঘটনা সেটি তদন্তের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের বাইরে আমরা কোনও কিছু বলতে পারবো না।