রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানার হত্যাচেষ্টা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জামিন পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ মামলায় খুরশিদ আলম উচ্চ আদালত থেকে আট সপ্তাহের জামিনে ছিলেন। জামিনের মেয়াদ শেষে তিনি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর তার আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি জামায়াতকর্মী মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী, আইনজীবী, পুলিশ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকসহ মোট ৯০ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা রহমানের আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করে শেরে বাংলা নগর থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বাদী মোহাম্মদ আলমগীর হোসাইন ভূঁইয়া ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৬টায় ব্যক্তিগত কাজে মিরপুর যাওয়ার উদ্দেশে ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজের সামনে যান। ওইদিন হরতালের সমর্থনে বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করে। এসময় শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিলকারী ও পথচারী লোকজনদের ওপর নির্বিচারে গুলি করেছিল। একপর্যায়ে মিছিলকারীরা ছুটাছুটি শুরু করলে পুলিশ পথচারী ও মিছিলকারীদের হত্যার উদ্দেশে বেধড়ক মারধর করে আটক করেছিল। এরপর পুলিশ প্রায় ১১ জন পথচারীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। যাদের মধ্যে মামলার বাদী মোহাম্মদ আলমগীর হোসাইন, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ফাহাদ, মাইন উদ্দিন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র ইসমাইল, রাফাত, আব্দুস শহীদ ও আব্দুল বাসেতসহ ছয়-সাতজনকে পুলিশ হাত-পা বেঁধে নির্বিচারে গুলি করে। এর মধ্যে বাদী মোহাম্মদ আলমগীর হোসেইন ভূঁইয়া (৫৫) এবং অপর ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ফাহাদ (৩০) পুলিশের গুলিতে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। অপরজন মহিন উদ্দিন ওরফে মাঈন উদ্দিন (২২) পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত অবস্থায় দীর্ঘদিন চিকিৎসারত ছিলেন।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে পুলিশ আহত অবস্থায় গ্রেফতার করে নিয়ে গেলেও চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে উল্টো বাদী আলমগীরসহ ১১ জনসহ এজাহার নামীয় ও ১৫০ থেকে ১৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে শেরে বাংলা নগর থানায় নাশকতার পৃথক তিনটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখায়। ঘটনার দিন বিক্ষোভস্থল থেকে গ্রেফতার করে ভুক্তভোগী আলমগীরকে শেরে বাংলা নগর থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আসামি শেরে বাংলা নগর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মু. আব্দুল মোমিন বাদী আলমগীরের বাম পায়ে গুলি করে দেয়। এসময় থানার এএসআই আসফাদ্দৌলা, এসআই মছিউর, এসআই কামাল হোসেন, এসআই বজলুর রহমান আলমগীরকে হত্যার উদ্দেশে রাইফেলের বাট, লাঠি ও লোহার রড দিয়ে হাতে, কোমরে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাত করে। এরপর পুলিশ আলমগীরকে প্রথমে জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিউিট ও হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে ২ মার্চ উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান নিটোরে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
এরপর বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শে ভুক্তভোগী আলমগীরের বাম পা কেটে ফেলা হয়। ফলে তিনি আজীবন পঙ্গুত্ব বরণ করেন।