এনবিআর-আত্মা প্রাকবাজেট আলোচনা       

সিগারেটে মূল্যস্তর কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব

সিগারেটে চারটি মূল্যস্তর (নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম) থাকায় তামাকের ওপরে কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছে না। বিশেষ করে নিম্ন এবং মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম কাছাকাছি হওয়ায় ভোক্তা যেকোনও একটি স্তরের সিগারেট বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এই দুটি স্তর একত্রিত করে সিগারেটে মোট তিনটি মূল্যস্তর নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স- আত্মা।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এই দাবি জানানো হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

প্রাক-বাজেট (২০২৫-২৬) আলোচনা সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সিগারেটের স্তর সংখ্যা চারটি থেকে কমিয়ে তিনটিতে নামিয়ে আনা এবং দাম বাড়ানোর বিষয় বিবেচনা করবে এনবিআর। পাশাপাশি প্রজ্ঞা ও আত্মা’র তামাক কর কাঠামো সংস্কারে অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানান তিনি।

সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আত্মা’র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন দৈনিক জনকণ্ঠের সিটি এডিটর কাওসার রহমান, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান, আত্মা’র কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন এবং কো-কনভেনর মিজান চৌধুরী।

আত্মা’র পক্ষ থেকে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের নিম্ন এবং মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে প্রতি ১০ শলাকার খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে স্বল্প আয়ের ধূমপায়ী ধূমপান ছাড়তে বিশেষভাবে উৎসাহিত হবে। একইসঙ্গে তরুণ প্রজন্ম ধূমপান শুরু করতেও নিরুৎসাহিত হবে বলে সভায় জানানো হয়। এছাড়া প্রতি ১০ শলাকা উচ্চ স্তরের সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা এবং প্রিমিয়াম স্তরের প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৯০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। এই তিনটি স্তরে সম্পূরক শুল্ক ৬৭ শতাংশ বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়।

প্রাক-বাজেট সভায় ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া সব তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়।

আসন্ন বাজেটে প্রস্তাবিত তামাক কর সংস্কার বাস্তবায়ন করা হলে ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য পূরণ এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণসহ মোট ১৭ লাখের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন) ব্যবহার করেন, বছরে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।