কে হচ্ছেন বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী

১৫ দিন শূন্য থাকার পর প্রধান প্রকৌশলী পেতে যাচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। সোমবার (৭ এপ্রিল) বেবিচকের বোর্ড সভায় নির্ধারণ হবে কে হবেন পরবর্তী প্রধান প্রকৌশলী। তবে এবার প্রধান প্রকৌশলী পদ নিয়ে ব্যাপক জলঘোলা হয়েছে। সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা, পরবর্তীকালে তাকেই পুনরায় আরও এক বছর চুক্তিতে মেয়াদ বাড়ানো, মন্ত্রণালয়ের আপত্তি—সব মিলিয়ে বেবিচকের অন্যতম শীর্ষ এই পদটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। এ কারণে সোমবারের বোর্ড সভায় কে হবেন পরবর্তী প্রধান প্রকৌশলী, তা নিয়ে বেবিচকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে প্রবল আগ্রহের জন্ম হয়েছে। রবিবার (৬ এপ্রিল) দিনভর এ নিয়ে আলোচনা ছিল তুঙ্গে। 

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে যিনি ভালো, সৎ, যোগ্য এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হবে, আমরা তাকেই এই পদে বসাবো।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে আগ্রহের বিষয় নয়, আমরা ব্যক্তিকেন্দ্রিক কোনও কিছু দেখবো না। যাকে নির্বাচিত করা হবে, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই করা হবে।’

বেবিচক সূত্রে জানা যায়,  গত বছরের ২৪ নভেম্বর দুদকের পক্ষ থেকে দুর্নীতির অনুসন্ধান চলা অবস্থায় হাবিবুর রহমানকে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তখন থেকে শুরু হয় বিতর্ক। দুর্নীতির অনুসন্ধান চলা অবস্থায় তার পদোন্নতি নিয়ে বেবিচকজুড়ে ক্ষোভও সৃষ্টি হয়। এরই মাঝে গত ২৭ জানুয়ারি ৮১২ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে হাবিবুর রহমানসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। হাবিবুর রহমানসহ এই মামলার আট আসামি যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য নিষেধাজ্ঞাও জারি করে আদালত। মামলার ঠিক আগের দিন গত ২৬ জানুয়ারি হাবিবুর রহমান দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে আবেদন করেন। এ নিয়ে আবারও শুরু হয় বিতর্ক। হাবিবুর রহমানের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর অভিযোগ করা হয়।

জানা যায়, মন্ত্রণালয় হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চায়, পাশাপাশি তার ব্যাপারে আপত্তি তোলে। এরপর বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। হাবিবুর রহমানের অপসারণ ও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রিট করেন ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান তুষার। আদালত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রুলও জারি করেন। এসবের মাঝে হাবিবুর রহমানের অতিরিক্ত মেয়াদে থাকার বিষয়টি ভেস্তে যায়। গত ২২ মার্চ তিনি অবসরকালীন ছুটিতে চলে যান।

সূত্র জানায়, অবসরে যাওয়ার পরও তিনি তার চুক্তিভিত্তিক মেয়াদের জন্য দৌড়ঝাঁপ চালান বলে অভিযোগ ওঠে। ঈদের দিন কাওলায় ঈদের জামায়াতের পর বেবিচকের শীর্ষ এক কর্মকর্তাকে নিয়ে তিনি কিছু প্রকল্পও পরিদর্শন করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি বোর্ড মিটিংয়ের আগের দিন আজ রবিবারও (৬ এপ্রিল) হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টার দফতরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগ দাখিল করেন বেবিচকের দুর্নীতিবিরোধী সমন্বয় কমিটির প্রধান ড. জোবাইর আলম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মূলত হাবিবুর রহমানের নানা বিষয় ঘিরেই পদটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়েছে। তিনি আবার স্বপদে ফিরেন কিনা, কিংবা নতুন কে আসছেন এই নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। ঈদের ছুটির পর রবিবার প্রথম কার্যদিবসে এটিই ছিল আলোচনার মূল বিষয়।

বেবিচকের দুর্নীতিবিরোধী সমন্বয় কমিটির প্রধান ড. জোবাইর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই তার নিয়োগের বিরোধিতা করে আসছিলাম। যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান চলমান রয়েছে, তাকে কেন নিয়োগ দেওয়া হলো, এটিই ছিল আমাদের বড় প্রশ্ন। সবশেষ আমরা কী দেখলাম—দুদক তাকেসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে মামলা করলো। এ থেকেই প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির অভিযোগ সঠিক ছিল।’

তিনি বলেন, ‘বেবিচক দুর্নীতিমুক্ত হোক এটা আমরা চাই। কিন্তু তাকেই কেন বারবার আনার চেষ্টা হচ্ছে। বেবিচকে  তার চেয়ে কি যোগ্য লোকের অভাব? সৎ, যোগ্য ও ভালো লোক আসুক এই পদে, এটিই দাবি আমাদের ‘

এদিকে বেবিচকের নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান, এ পদে কে দায়িত্ব পাচ্ছেন তা চূড়ান্ত হবে সোমবার (৭ এপ্রিল) বোর্ড সভায়। প্রাথমিক তালিকায় রয়েছেন—মো. জাকারিয়া হোসেন ও শুভাশিষ বড়ুয়া। এ ছাড়া এই তালিকায় রয়েছেন সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) এ. এইচ. এমডি নুরউদ্দিন চৌধুরী ও সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল আফরোজ। অভিযোগ রয়েছে, শহিদুল আফরোজ প্রধান প্রকৌশলী থাকাকালীন তাকে একটি মামলায় জড়ানো হয়। পরবর্তীকালে বিভাগীয় তদন্তে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। তিনিও প্রধান প্রকৌশলী হতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। 

আদালতে রিট দায়ের করা ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান তুষার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাবেক প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সব তথ্য দিয়ে আমরা রিট দায়ের করেছিলাম। সেটি নিয়ে আদালতের নির্দেশনাও ছিল। কিন্তু সেই নির্দেশনা অমান্য করে আমরা কিছু কার্যকলাপও দেখেছি। সোমবারের বোর্ড সভার ওপর আমাদেরও নজর রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অবশ্যই একজন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি এই পদে আসুক, এটিই আমরা চাই।’