ভারত সুপরিকল্পিতভাবে শত শত মানুষ পুশ-ইন করছে: বিজিবি মহাপরিচালক

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, বাংলাদেশি নাগরিকের নামে সুপরিকল্পিতভাবে ভারত রোহিঙ্গাসহ শত শত মানুষকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে পুশ-ইন করছে, যা ন্যক্কারজনক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।

সোমবার (১২ মে) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, যেসব সীমান্তে জনবসতি নেই, এমন জায়গাগুলো টার্গেট করে তারা এসব পুশ-ইন করছে। যেমন- খাগড়াছড়ির পানছড়ির বিভিন্ন এলাকা, কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারির চরাঞ্চল এলাকা দিয়ে তারা এরই মধ্যে পুশ-ইন করেছে। যেখানে টহল যেতে সময় লাগে। এ পর্যন্ত ২০২ জনকে বিজিবির হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে ৩৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিক।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সীমান্তের স্থলবেষ্টিত এলাকায় বিজিবির সতর্ক নজরদারির কারণে তারা এবার গ্রাউন্ডে না পেরে সুন্দরবনের দিক দিয়ে রিমোর্ট একটা চর মান্দারবাড়িতে ভারতীয় জাহাজের মাধ্যমে আরও ৭৮ জনকে ফেলে গেছে। সেখান থেকে কোস্টগার্ড সেসব মানুষকে উদ্ধার করে। তাদেরও নিজ নিজ এলাকায় পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী জানান, গত ৭ ও ৮ মে রাতের বেলায় ভারত পুশ করেছে। বিজিবি এমন ২০২ জনকে পেয়েছে। বিএসএফ সীমান্তের বিভিন্ন কর্নারে পুশ-ইন করছে। এমন জায়গায় পুশ-ইন করেছে যেখানে মানুষজন বা জনবসতি ছিল না। তারা জানেন যে সীমান্তের প্রত্যেকটি স্পট ফিজিক্যালি নজরদারি করে রাখা যায় না। যে জায়গাতে কেউ ছিল না, সে সুযোগে তারা এটা করেছে। এই ২০২ জনের মধ্যে বিজিবি পরে মিটিং করে পুলিশের এসবির মাধ্যমে ভেরিফিকেশন করে বাংলাদেশি হিসেবে কিছু পাওয়া গেছে। এরা ২-৩ বছর থেকে শুরু করে ২০-২৫ বছর আগে নানা কাজে ভারতে গিয়েছিল। সেখানে তাদের সন্তানাদিও হয়েছে। সেসব সন্তানদের অনেকেই ভারতের আধার কার্ড বা ডকুমেন্টস পেয়েছিল। কিন্তু ভারতের পুলিশ ও বিএসএফ তাদের এগুলো রেখে দিয়ে বাংলাদেশে পুশ ইন করেছে। আর যেসব বাংলাদেশি পাওয়া গেছে, তাদের প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের নিজ নিজ এলাকায় পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। এর মধ্যে ৩৯ জন রোহিঙ্গা পাওয়া গেছে। এই রোহিঙ্গা যারা আমাদের ক্যাম্পে বিভিন্ন সময় রেজিস্টার্ড ছিল, কোনোভাবে ওদিকে পালিয়েছিল। তাদের আরআরসি ও ইউএনএইচসিআরের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে।

বিজিবির ডিজি আরও বলেন, এর মধ্যে আরেকটা অ্যালার্মিং বিষয় যে কিছু রোহিঙ্গা পাওয়া গেছে ভারতের ইউএনএইচসিআরের রিফিউজি। ওখানে তাদের রেজিস্ট্রেশন করা। আইডি কার্ডও আছে। সেটা আমরা আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইউএনএইচসিআরের মাধ্যমে সবাইকে জানাতে চাই যে এটা একটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। যে দেশের রিফিউজি সেখানেই তো তাদের রাখা দরকার ছিল। পুরো বিষয়টিকেই বিএসএফ বরাবরের মতো অস্বীকার করছে। তারা বলছে জানে না। রোহিঙ্গারা নিজেই চলে গিয়েছিল ভারত। তারা আবার নিজেরাই প্রত্যাবর্তন করেছে বলে তারা বলার চেষ্টা করছে। এটা আমরা মানছি না। আমরা ফ্ল্যাগ মিটিং করে প্রতিবাদলিপি দিয়েছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও যোগাযোগ করে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেছি। তারা যদি বাংলাদেশি হয় আমরা গ্রহণ করবো। সেটা একটা নিয়মিত প্রসেসের মাধ্যমে হতে হবে। এভাবে লুকোচুরি করে দেওয়ার মধ্যে হতে পারে না।

তিনি বলেন, বিজিবি জানতে পেরেছে খাগড়াছড়ি সীমান্ত এলাকায় আরও প্রায় দুই থেকে তিনশ’ জনের মতো শরণার্থী ওপারে রাখা আছে। যাদের বিএসএফ সুযোগ বুঝে পুশ-ইন করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বিজিবি পেট্রোলিং বাড়িয়ে এবং সজাগ থাকার কারণে গত দুদিন ধরে তারা চেষ্টা করছে, পুশ -ইন করতে পারছে না। কিন্তু এখনও তারা সেই সীমান্ত এলাকায় আছে।