সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে হত্যার হুমকি বিএনপি নেতার, প্রতিবাদে মানববন্ধন

রাজধানীর দক্ষিণখান থানার ট্রান্সমিটার মোড়ের বাসিন্দা প্রতিবন্ধী নাহিদ ইসলামের পাথর সরবরাহের ব্যবসা দখল নিয়ে মানববন্ধনের সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিককে হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই নেতার নাম আল আমিন সরকার ওরফে শামীম আল মামুন। তিনি ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক। এরই প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন উত্তরা প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকরা।

মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকাল ৫টার দিকে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের খালপাড়ে অবস্থিত উত্তরা প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আল আমিন সরকার ও তার ভাই মইম সরকারকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি দক্ষিণখানের ফায়দাবাদ এলাকায় বিএনপি নেতা আল আমিন সরকারের বিরুদ্ধে নাহিদ নামের এক প্রতিবন্ধী যুবক তার পরিচালিত ইট-পাথরের ব্যবসা দখলের অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেন। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি ফেসবুকে শেয়ার দেন উত্তরা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি বদরুল আলম মজুমদার। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মব সৃষ্টি করে ওই সাংবাদিককে মেরে ফেলার অডিও পাঠান বিএনপি আল আমিন সরকার ও তার অনুসারীরা। সেইসঙ্গে ফেসবুকে বিভিন্ন ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে সাংবাদিক বদরুল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে নানা অপতথ্য ছড়ান আল আমিনের অনুসারীরা। 

এসবের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতারা বলেন, ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আল আমিন ২০১৬ সালে তার নিজ দোকান থেকে ইয়াবাসহ আটক হয়ে প্রায় ৫ মাস জেল খাটেন। ৫ আগস্টের পর বিএনপির পদ ব্যবহার করে এলাকায় নতুন বিল্ডিংয়ে মালামাল সরবরাহ, ময়লা, ডিস ইন্টারনেটের ব্যবসা দখলে নেন। সিনিয়র নেতাদের মদতে এসব অপকর্ম করেন আল আমিন সরকার।  

সাংবাদিক বদরুল আলম মজুমদার বলেন, ‌‘আল আমিন সরকার উগ্র প্রকৃতির লোক। তার ভাই মইম কিশোর গ্যাংয়ের লিডার। এর আগে মিরপুরে এক প্রোগ্রামে গিয়ে মারামারি করার কারণে দল থেকে বহিষ্কার হন আল আমিন। পরে দলের এক শীর্ষ নেতার সুপারিশে পদ ফিরিয়ে দেন নেতারা। যেহেতু দীর্ঘদিন এই এলাকায় বসবাস করি, তাই বিভিন্নভাবে খবর আসে থানার সেই শীর্ষ নেতা বিএনপির নামে দক্ষিণখানে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছে। এসব বাহিনী দিয়ে কোটি টাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণসহ সব কিছু তার ইশারায় চালানোর জন্যই মাদক মামলার আসামিকে বিএনপির পদ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।’ 

হুমকির বিষয়ে সাংবাদিক বদরুল আলম মজুমদার বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ফেসবুকে শেয়ার দেওয়ার কারণে আমাকে মবের মাধ্যমে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন আল আমিন। আমি দুবার উত্তরা প্রেসক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। ক্লাবের নেতৃত্বে থাকায় বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াতসহ সব দলের নেতাদের সঙ্গে উঠাবসা করতে হয়েছে। এটি সাংবাদিকদের জন্য নতুন কিছু নয়। জুলাই আন্দোলনে পুলিশ আমাকে উত্তরা থেকে ধরেও নিয়ে গিয়েছিল। অথচ মাদক ব্যবসায়ীরা এখন আমাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যাতে এসব বিতর্কিত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

মানববন্ধনে উপস্থিত উত্তরা প্রেসক্লাবের সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘প্রকাশিত সংবাদ শেয়ার করার জেরে একজন সাংবাদিককে মেরে ফেলার হুমকি নতুন বাংলাদেশের জন্য লজ্জাজনক। আমরা বলতে চাই, যারা অন্যায়ভাবে উত্তরার সিনিয়র সাংবাদিক বদরুল আলম মজুমদারকে মারার হুমকি ও তার নামে অপতথ্য ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে দল থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ 

মানববন্ধনে উত্তরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সমাজের চিত্র তুলে ধরাই আমাদের গণমাধ্যমকর্মীদের দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি জীবনের ওপর হুমকি আসে তাহলে এর দায়ভার রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। সাংবাদিক বদরুল আলম মজুমদারকে হুমকি দেওয়া ওই বিএনপি নেতাসহ তার সহযোগীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

মানববন্ধনে উত্তরার বসবাসরত অন্তত অর্ধশতাধিক গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে আল আমিন সরকারকে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।