জেট ফুয়েলের দাম কমায় ভাড়া কমানো আহ্বান, সাড়া দিচ্ছে এয়ারলাইনগুলো

উড়োজাহাজ চলাচলে ব্যবহৃত জেট ফুয়েলের দাম কমায় যাত্রীদের ভাড়া কমানোর লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকালে বেবিচক সদর দফতরে আয়োজিত এক বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান। 

বৈঠকে তিনি বলেন, ‘জেট ফুয়েলের দাম কমার ফলে যাত্রীরা যেন ভাড়ার ক্ষেত্রে এর সুফল পায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে এয়ারলাইনগুলোর দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।’

বৈঠকে এয়ারলাইনগুলোর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। তারাও এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেন। বৈঠকেই তারা জানান, শিগগিরই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সভায় বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহুল প্রতীক্ষিত তৃতীয় টার্মিনালের কার্যক্রম আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। তিনি বলেন, ‘টার্মিনালের সব নির্মাণকাজ ও সেবামূলক কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে পরিচালিত হবে, যাতে দেশি-বিদেশি যাত্রীরা সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন ও আধুনিক সেবা পেতে পারেন।’

এসময় কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের প্রসঙ্গেও কথা বলেন বেবিচক চেয়ারম্যান। এই কার্যক্রম ইতোমধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক মান অনুসারে নিরাপত্তা, কাস্টমস, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। চলতি বছরের জুন মাসের শেষভাগ বা জুলাই মাসের প্রথম দিক থেকেই কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।’

বেবিচক চেয়ারম্যান সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, দেশের রফতানি বাণিজ্যকে আরও গতিশীল ও কার্যকর করতে এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অধিক সংখ্যক কার্গো অপারেশন চালু করা জরুরি। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স ও কার্গো অপারেটরদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

বেবিচক চেয়ারম্যান সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি এয়ারলাইন্স প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা এসব বিমানবন্দরকে কেন্দ্র করে নতুন আন্তর্জাতিক রুট চালু করতে আগ্রহী হন এবং নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনায় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আশ্বস্ত করেন যে এ উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, লজিস্টিক সহায়তা এবং প্রশাসনিক সুবিধা নিশ্চিত করতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করবে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া এয়ারলাইন্স প্রতিনিধিরা গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন। তিনি এ সময় আশ্বস্ত করেন যে এসব সমস্যা নিরসনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘বিমান চলাচলকে আরও সহজ, সাশ্রয়ী ও কার্যকর করতে এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

সম্প্রতি নানান টানাপড়েনে পড়ে সাময়িকভাবে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায় বেসরকারি এয়ারলাইন নভোএয়ারের। সংস্থাটি আগামী ২১ মে থেকে এয়ারলাইনটি আবারও তাদের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে বলে বৈঠকে জানায় তাদের প্রতিনিধিরা। এসময় বেবিচক চেয়ারম্যান ও অন্য এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধিরা সংস্থাটিকে অভিনন্দন জানান। 

সভায় উপস্থিত ছিলেন বেবিচক-এর সদস্য (ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশনস), পরিচালকসহ (ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশনস) দেশি ও বিদেশি এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলোর উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা, যারা উক্ত আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মতামত প্রদান করেন।