সকাল সকাল শ্রমিকদের মিছিলে উত্তাল রাজধানীর বিজয়নগরে অবস্থিত শ্রম ভবন। সোমবার (১৯ মে) সকাল ৮টায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, তার আগ থেকেই প্রধান ফটকের সামনে ব্যানার দিয়ে কর্মকর্তাদের প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। আশপাশের সড়কে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন কয়েকশ’ শ্রমিক।
আল্টিমেটামের পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেও বকেয়া বেতন এবং ঈদ বোনাসের আশ্বাস না পেয়ে রবিবার রাতেও শ্রমিকদের অনেকে সেখানে অবস্থান নেন। সকাল থেকে অন্যরাও খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে যোগ দিচ্ছেন।
রবিবার রাত সাড়ে ১১টায় শ্রমিক নেতা শহীদুল ইসলাম জানান, দাবি মেনে নিতে বিকাল ৫টায় সরকারকে ৫ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। তবে সে সময়সীমা রাত ১০টায় শেষ হলেও দাবি পূরণের কোনও আশ্বাস মেলেনি। তাই তারা রাতেও শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। তারা জানান, সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না পেলে আজ কর্মকর্তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
এর আগে গত ১০ মে শ্রম ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন শ্রমিক নেতারা। তখন তারা জানিয়েছিলেন, ৭ মে তাদের সব বকেয়া পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাই তারা আবার রাজপথে নামবেন।
এরই আলোকে গত ১১ মে গাজীপুরে ও ১২ মে বিজয়নগরে শ্রম ভবনের সামনে সমাবেশ করেন তারা। এতেও মালিকপক্ষের টনক নড়েনি। সরকারও কোনও উদ্যোগ নেয়নি। তাই রবিবার বিকালে আবারও বিক্ষোভ করেন।
শ্রমিকরা বলেন, ‘গত দুই মাস ধরে ঈদ বোনাস, সার্ভিস বেনিফিট ও যাবতীয় বকেয়া পরিশোধের দাবিতে গাজীপুর এবং ঢাকায় আমরা আন্দোলন করে আসছি। গাজীপুরের রাস্তা অবরোধসহ ঈদের আগে রমজান মাসে টানা সাত দিন শ্রম ভবনে অবস্থান কর্মসূচি করি। সে সময় তিন মাসের বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাসসহ যাবতীয় বকেয়ার দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সরকারের উদ্যোগে গত ২৯ মার্চ, ঈদের একদিন আগে মালিকপক্ষ আনুমানিক ১৭ কোটি টাকা পাওনার বিপরীতে ৩ কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। ৩ কোটির ওয়াদা করেও দেওয়ার সময় ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা দেয়। সেই টাকা পেতেও নানারকম বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।’
এর আগে রবিবার (১৮ মে) বিকাল ৩টায় গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের ৮টি পোশাক কারখানা শ্রমিকের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনের সামনে সমাবেশ থেকে সরকার ও মালিকপক্ষকে পাঁচ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম। তখন তিনি বলেছিলেন, দাবি না মানলে প্রয়োজনে দেশ অচল করে দেবেন।
তারা বলেন, ‘২৯ মার্চের বৈঠকে শ্রম সচিব বলেছিলেন মে দিবসের আগে সব শ্রমিক যেন বকেয়া পায় সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শ্রম সচিবের বক্তব্যের প্রতি সম্মান রেখে ২৯ মার্চ আমরা অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করি। সেই ধারাবিকতায় যাবতীয় পাওনা পরিশোধের জন্য ৮ এপ্রিল শ্রম সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় (সরকারপক্ষ-মালিকপক্ষ-শ্রমিকপক্ষ) বৈঠকে অংশগ্রহণ করি এবং সিদ্ধান্তগুলো মেনে নেই।’
শ্রমিকরা আরও বলেন, ‘ওই বৈঠকে পূর্ব নোটিশ ছাড়াই কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। ওই পরিস্থিতিতে যাবতীয় বকেয়া পরিশোধ এবং মালিকের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাবের জন্য অতিরিক্ত শ্রম সচিবের নেতৃত্বে একটি ত্রি-পক্ষীয় কমিটি গঠন করা হয়। ২২ এপ্রিল সেই কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব পাওনা ৭ মে পরিশোধের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় মালিকপক্ষ। সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ তদারকি করা হবে বলেও আলোচনা হয়। নির্ধারিত দিন অতিবাহিত হলেও পাওনা টাকা আমরা পাইনি। কমিটির পক্ষ থেকেও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সুনির্দিষ্টভাবে কোনও কিছু জানানো হয়নি।’