‘নারী সংস্কার কমিশনের বিরুদ্ধে আক্রমণে সরকারের নীরবতা হতাশার’

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের পর কমিশনকে লক্ষ্য করে হওয়া আক্রমণ নিয়ে সরকারের নীরব ভূমিকা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন।

তিনি বলেন, ‘কমিশন নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে এমন একটি কমিশনকে অবজ্ঞা ও আক্রমণের মুখে ফেলে দেওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত।’

রবিবার (২৫ মে) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে (কেআইবি) নাগরিক সমাজের সঙ্গে সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

গীতিআরা নাসরিন বলেন, ‘নারী কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে মতভেদ থাকতেই পারে। কিন্তু তারা তো সবার মতামত নিয়ে সময় ও শ্রম দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তারপর যদি বলা হয় কমিশন বাতিল করতে হবে, তখন প্রশ্ন ওঠে— আমরা কি চিন্তার স্বাধীনতাও হারিয়ে ফেলছি?’

তিনি আরও বলেন, ‘নারী সংস্কার কমিশনকে যেভাবে অবহেলা ও আক্রমণ করা হচ্ছে, তা দুঃখজনক। সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে এখনও কোনও স্পষ্ট বক্তব্য আসেনি, এটি করা যাবে না, এমনটি বলা হয়নি।’

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘নারীদের প্রতি যে বৈষম্য রয়েছে, তা দূর করতে তাদের অবস্থান কী? এসব বিষয়ে দলগুলোর উচিত স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া। পাশাপাশি গণমাধ্যমের যে পরিস্থিতি, সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন আদৌ সম্ভব কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন।’

৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার দাবি

আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘রাজনীতিতে নারীরা বর্তমানে এক অসাধারণ সুযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। অতীতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তারা গৃহস্থালিতে ফিরে গেলেও এবার তরুণ প্রজন্মের নারীরা সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হতে চাইছেন।’

তিনি বলেন, ‘এই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নারীদের আগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে।’

সামিনা লুৎফা আরও বলেন, ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তা প্রয়োজনীয়। এই আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে এবং অন্যান্য সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়েও সমাজে আলোচনার পরিবেশ থাকা জরুরি।’

ঐকমত্য না হওয়া বিষয়গুলোও জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে

আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো জনগণকে জানানো হবে। একইসঙ্গে যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়নি, সেগুলোও স্বচ্ছতার স্বার্থে প্রকাশ করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক আদর্শিক পার্থক্যের কারণে সব বিষয়ে ঐকমত্য সম্ভব না হলেও মৌলিক বিষয়ে সংলাপ অব্যাহত থাকবে।’

আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন— গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন ১১ জন প্রতিনিধি। তাদের মধ্যে ছিলেন—সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির, অধ্যাপক এ কে এম ওয়ারেসুল করিম, গবেষক মির্জা এম হাসান, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিরা দেওয়ান, নারী প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুন নাহার মিষ্টি, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা রাজিয়া।