আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন মাঠে অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের ইজারা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েও ইজারা পাননি ‘জায়ান এন্টারপ্রাইজ’। বরং ইজারা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে তৃতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা ‘এস এফ করপোরেশন’-কে, যে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আগেও ভুয়া পে-অর্ডার দাখিলের অভিযোগ রয়েছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘জায়ান এন্টারপ্রাইজ’ হাটের ইজারা নিতে ২ কোটি ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭০০ টাকা দরপত্র জমা দেয়। অথচ ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা দর দিয়ে ‘এস এফ করপোরেশন’ ইজারা পেতে যাচ্ছে। ফলে সরকার সম্ভাব্যভাবে ৭৭ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে।
গত ২৪ মে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সম্পত্তি বিভাগ থেকে ‘এস এফ করপোরেশন’ বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়, যেখানে উল্লেখ করা হয়, তাদের দর সর্বোচ্চ হওয়ায় তা গৃহীত হয়েছে এবং ইজারার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়, ৫০ লাখ টাকার জামানতের অর্থ সমন্বয় করে নির্ধারিত খাতে তা জমা দিতে হবে।
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ডিএনসিসিতে লিখিত চিঠি দিয়েছেন ‘জায়ান এন্টারপ্রাইজ’-এর মালিক মো. মনিরুজ্জামান মনির। চিঠিতে তিনি বলেন, ‘আমি সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েও কার্যাদেশ পাইনি। ইজারা নীতিমালা, পিপিআর এবং দরপত্রের শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন করেছি। আমার দরপত্রে কোনও ত্রুটি ছিল না। তারপরও আমাকে উপেক্ষা করে তৃতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা বেআইনি, অনৈতিক এবং বৈষম্যমূলক।’
মনিরুজ্জামান মনির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডিএনসিসি আমাকে কোনও লিখিত কারণ জানায়নি। মৌখিকভাবে শুনেছি, আমার ট্রেড লাইসেন্স নাকি আপডেট না। অথচ অনলাইনে গিয়ে যেকোনও সময় দেখা যাবে, আমার ট্রেড লাইসেন্স হালনাগাদ রয়েছে। আমি ঠিকই দিয়েছি, তারাই কাগজে ত্রুটি তৈরি করেছে। কারণ ট্রেড লাইসেন্সের বিষয়গুলো তো তাদের হাতেই। তাছাড়া তারা বলছে, আমার নাকি ইনকাম ট্যাক্সের কাগজ নাই। এটা তারা আমাকে প্রথম বলে নাই। অথচ আমি সবই জমা দিয়েছি। তারপরও যদি কোনও কিছু মিসিং হয় সেটা তো আমাকে বলতে পারতো, আমি আবারও চেক করে দেখতাম। আমার কাগজ নিয়ে তারাই ঝামেলা তৈরি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা এটা একটা অজুহাত মাত্র। তারা পছন্দের লোককে ইজারা দিতে চায়, তাই আমাকে বাদ দিয়েছে। অথচ আমাকে দিলে সরকারের কোনও ক্ষতি ছিল না, বরং প্রায় ৭০ লাখ টাকা লাভ হতো। তাদের তো উচিত সরকারের লাভ কিসে সেটা চিন্তা করা।’
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাকে ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, সেই ‘এস এফ করপোরেশন’-এর মালিক শেখ ফরিদ হোসেন ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি। তার বিরুদ্ধে আগেও ভুয়া পে-অর্ডার দাখিলের অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের ১৯ মার্চ গাবতলী পশুর হাটের ইজারার দরপত্রে অংশগ্রহণ করে তিনি ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি জামানত দাখিল করেন, যা পরে অগ্রণী ব্যাংক, আগ্রাবাদ করপোরেট শাখায় ‘ভুয়া’ হিসেবে প্রমাণিত হয়। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন এখনও ডিএনসিসির রেকর্ডে রয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত ওসমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি কিছু বলতে পারবো না। কথা বলা নিষেধ আছে।’ তবে তিনি নিশ্চিত করেন তৃতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে হাটের ইজারা দিতে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার কাছে কোনও আবেদন সরাসরি আসে না। যাচাই-বাছাই হয়ে আসে। সেখানে আমি দেখেছি প্রথম দরদাতার ইনকাম ট্যাক্সের কাগজ জমা দেন নাই। তাছাড়া তার ট্রেড লাইসেন্সেরও মেয়াদ নেই। তার দরপত্র বাতিল করতে প্রথম কারণই যথেষ্ট। দ্বিতীয় কারণে তো যাওয়ার প্রয়োজন নাই। এখন ইজারা পাবে না, তাই স্বাভাবিকভাবে নানা অভিযোগ তুলবে।’
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে মেসেজ করা হলেও উত্তর দেননি।