রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ এলাকা ও মোহাম্মদীয়া হাউজিংয়ের প্রধান সড়কে কোরবানির ঈদের দিনে গড়ে উঠছে ব্যতিক্রমধর্মী এক মাংসের হাট। কয়েক বছর ধরেই ঈদুল আজহার দিন বিকালে এসব এলাকায় বিভিন্ন বাসা-বাড়ি থেকে সংগৃহীত মাংস বিক্রি করেন দরিদ্র মানুষেরা। এর পাশাপাশি সারা দিন কাটাকাটির পর বিকালে গরুর মাথা ও অন্যান্য ‘ছাট মাংস’ বিক্রি করতে বসেন কসাইরাও। অবশ্য গত কয়েকবছর বছর ধরে এসব এলাকায় ঈদের দিন বিক্রির জন্যও গরু জবাই করেন কসাইরা।
স্থানীয়রা বলছেন, গত বছর হাতে গোনা কয়েকজন এই কাজ শুরু করলেও এবছর বিক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। পাশাপাশি, সংগৃহীত মাংস বিক্রির হারও গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। বিকাল থেকে শুরু হয়ে এই হাট চলে রাত অবধি।
শনিবার (৭ জুন) বিকেল থেকে শিয়া মসজিদসংলগ্ন জাপান গার্ডেন সিটির কাছে শুরু হয় এই মাংস বিক্রি। একই লাইনে মোহাম্মদীয়া হাউজিংয়ের প্রধান সড়কেও গড়ে ওঠে মাংসের অস্থায়ী বাজার।
সংগৃহীত মাংসের মান অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় প্রতি কেজি। তবে হতদরিদ্র মানুষদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা কম দামে—অনেক সময় ব্যাগসহ মাংস কিনে নিচ্ছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাপ ছাড়াই ২০০ টাকার আশেপাশে দাম দিয়ে কিনে নিচ্ছেন তারা।
আবার পেশাদার কসাইরাও আছেন, যারা সারা দিন মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসায় কোরবানির পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুতের কাজ করেছেন। তারা অনেক বাড়ি থেকে মাংস পেয়েছেন, সেগুলোও বিক্রি করতে দেখা গেছে।
ইমদাদুল হক নামের এক বিক্রেতা জানান, ‘অনেকেই কোরবানি দিতে পারে না। তাদের জন্যই গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করছি।’ তিনি ভ্যানে করে মাংস বিক্রি করছিলেন ৭৫০ টাকা কেজি দরে। তার পাশেই আরেকজন ব্যবসায়ী ৮০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রির কথা জানান, তবে তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি। সন্ধ্যার আগেই তাদের মাংস বিক্রি প্রায় শেষ হয়ে যায়।
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা থেকে আসা কয়েকজন পেশাদার কসাইও এই হাটে মাংস বিক্রি করছেন। শিয়া মসজিদের মোড়ে পাওয়া গেল নুরুজ্জামানকে। তিনি জানান, ‘সারা দিন গরু কেটে দেই। যেসব গৃহস্থ আমাদের মাংস দেন, সেগুলো আমরা বিক্রি করি।‘ তিনি ৪০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করছেন এবং ইতোমধ্যে অনেক মাংস বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানান।
ঢাকা উদ্যান এলাকার বাসিন্দা বিল্লাল বলেন, ‘চারশ টাকা কেজি দরে দুই কেজি মাংস কিনেছি, মোট ৮০০ টাকা লেগেছে।’
বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়েই জানান, এখানে সব ধরনের মানুষের জন্য বিভিন্ন দামের মাংস পাওয়া যায়। ভালো মানের মাংসের দাম পড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা প্রতি কেজি।
সন্ধ্যার দিকে যখন মাংস বিক্রি শেষ পর্যায়ে, তখনও মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে শিশু ও নারীদের মাংস সংগ্রহ করতে দেখা যায়।