যান্ত্রিক জীবনের ফাঁকে ঈদের কয়েকটা আনন্দময় মুহূর্ত

নগরায়নের দাপটে দিনদিন কমে আসছে রাজধানীর খোলা জায়গা ও পারিবারিক বিনোদনের উপযুক্ত পরিবেশ। শিশুদের জন্য নেই খেলার মাঠ, বড়দের জন্য নেই প্রকৃতির শান্ত ছায়া। যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি আর নিঃস্বতার মাঝে তাই ছুটির দিনগুলোই হয়ে ওঠে মুক্তির একমাত্র পথ। পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে সেই খোলা বাতাসের খোঁজে আবারও বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় ঢল নেমেছে নগরবাসীর। বিশেষ করে পরিবারের শিশুদের একটু সুষ্ঠু আনন্দ দিতে এবং বড়রা নিজেরাও কিছুটা স্বস্তি খুঁজে নিতে প্রতিবারই এসব কেন্দ্রে আসেন।

সোমবার (৯ জুন) ঈদুল আজহার তৃতীয় দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর জিয়া উদ্যান, সামরিক জাদুঘর, নভোথিয়েটার, বিমান জাদুঘর, চিড়িয়াখানা, হাতিরঝিল, শিশুমেলা ও সংসদ ভবনের সামনের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি। চাকরিজীবী, গৃহিণী ও শিশু-কিশোরদের পদচারণায় দিনভর সরব ছিল পুরো শহরের বিনোদন কেন্দ্রগুলো।

আগত বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র ও পার্কে আসা দর্শনার্থীরা জানান, কোথাও ছিল স্বস্তির পরিবেশ, কোথাও অব্যবস্থাপনার কারণে হতাশা। তবে সামগ্রিকভাবে ঈদের ছুটির দিনগুলোয় রাজধানীজুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ ও প্রাণচঞ্চলতা।

1000204247'জিয়া উদ্যানে ছিল স্বস্তির আবহ'

বিভিন্ন গাছপালায় ঘেরা ছায়াময় জিয়া উদ্যানে দুপুরের পর থেকেই বাড়তে থাকে দর্শনার্থীদের ভিড়। অনেকে এসেছেন শিশুদের নিয়ে, কেউবা ঘুরে দেখছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধি, কেউবা আবার লেকের ধারে বসে ছবি তুলছেন বা বিশ্রাম নিচ্ছেন।

তেজগাঁও থেকে পরিবার নিয়ে জিয়া উদ্যানে ঘুরতে এসেছেন গৃহিণী সোনিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, 'ঈদের দিন কোরবানির ব্যস্ততায় বের হওয়া হয়নি। আজ এলাম। শিশুরা তো সব সময় ঘরে থাকে। তাই তাদের নিয়েই বের হলাম।'

'নভোথিয়েটারে ভোগান্তির চিত্র, সহজ ছিল সামরিক জাদুঘরে'

ঈদের ছুটিতে রাজধানীর অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য বিজয় সরণির নভোথিয়েটার। তবে এবার দর্শনার্থীদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে টিকিট কেনাকে কেন্দ্র করে। লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও টিকিট পাচ্ছেন না অনেকেই। এদিকে নভোথিয়েটারের পাশেই সামরিক জাদুঘরে তেমন কোনও ভোগান্তি ছাড়াই টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন দর্শনার্থীরা। ভেতরে প্রবেশ করে তারা দেখছেন যুদ্ধবিমান, ট্যাংকসহ বিভিন্ন সামরিক উপকরণ।

নভোথিয়েটার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে পরিবার নিয়ে আগত দর্শনার্থী রাসেল মাহমুদ বলেন, 'প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। এখনও টিকিট পাইনি। ঈদের সময় এমন ভিড় হবে এটা কর্তৃপক্ষের বোঝা উচিত ছিল।'

অনেক দর্শনার্থী টিকিট না পেয়ে আশপাশের বিকল্প বিনোদন কেন্দ্রের খোঁজ করতে দেখা যায়।

তবে সামরিক জাদুঘরের দর্শনার্থীরা জানিয়েছেন স্বস্তির কথা। তারা বলেন, নানা সামরিক সরঞ্জাম দেখার পাশাপাশি এই জাদুঘরের নান্দনিক ভবন সবার দৃষ্টি কাড়ছে।

'সংসদ ভবনের সামনে ভ্রাম্যমাণ দোকানের মেলা'

জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের সড়ক যেন রীতিমতো বাজারে রূপ নিয়েছে। শিশুদের খেলনা, নারীদের সাজসজ্জার সামগ্রী, খাবারের দোকানসহ নানা রকম ভ্রাম্যমাণ দোকানে ছিল উপচে পড়া ভিড়। সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে শিশুদের খেলনার দোকানে। সন্তানদের আবদার মেটাতে হিমশিম খেতে হয়েছে অনেক অভিভাবককে।

'চিড়িয়াখানা, বিমান জাদুঘর ও শিশুমেলায় ছিল শিশুদের উচ্ছ্বাস'

ঈদের ছুটি মানেই দর্শনার্থীদের জন্য অন্যতম প্রধান বিনোদন কেন্দ্র মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা। যথারীতি এবারও ঈদের তৃতীয় দিনে ছিল ব্যাপক ভিড়। ঢাকাসহ আশপাশের জেলা থেকেও দর্শনার্থীরা এসেছেন পশু-পাখি দেখতে। বাঘ, সিংহ, সাপ ও হরিণ দেখে শিশুরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। বিশেষ করে শিশু দর্শনার্থীরা বেশ আগ্রহ নিয়ে চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখেছে।

এছাড়া আগারগাঁওয়ের বিমান জাদুঘর এবং শিশুমেলায় ছিল রাইড ও প্রদর্শনী ঘিরে শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস।