মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কক্সবাজারে আসার আট বছর হতে চললো। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ এবং ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে বাস্তুচ্যুত হয়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বনভূমিতে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে আশ্রয় নেওয়া সাড়ে তিন লাখসহ বর্তমানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বর্তমানে কক্সবাজারে বসবাস করছে। কিন্তু এ বিপুল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে স্থানীয় মানুষের টানাপোড়েন কমেনি। শরণার্থী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা সহজে কমে না। এরজন্য ধারাবাহিকভাবে সংহতি বাড়াতে কাজ করতে হয়।
কীভাবে দূরত্ব কমে সে বিষয়ে একটি গবেষণা পাওয়া যায় জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) কার্যালয়ের। গবেষণায় বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট শুরু হওয়ার আট বছর পর, বাংলাদেশি স্থানীয় জনগণ এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। পূর্ববর্তী গবেষণা দেখায় যে অনেক স্থানীয় মানুষ শত্রুতা বোধ করে এবং নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাবের মুখোমুখি হয়েছে। ‘Bangladesh policy brief: Gaming for cohesion’ গবেষণাটি সামাজিক সম্প্রীতি উন্নত করার একটি নতুন উপায় পরীক্ষা করে। সেখানে একটি মোবাইল গেমের উল্লেখ আছে যেখানে "বাংলাদেশী" বা "রোহিঙ্গা" হিসেবে চিহ্নিত করে ২৫শ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলাফলগুলো দেখায় যে খেলোয়াড়রা যারা "রোহিংগ্যা" বটগুলোর সাথে জুটি বেঁধেছিল তাদের মনোভাব ১২ থেকে ১৮ শতাংশ বেশি ইতিবাচক হয়ে ওঠে। সামগ্রিকভাবে, গবেষণাটি পরামর্শ দেয় যে মোবাইল গেমগুলো সামাজিক সম্পর্ক উন্নত করার একটি সস্তা, কার্যকর উপায় হতে পারে- বিশেষত যদি সেগুলো মজাদার হয় এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের কর্মসূচির সাথে যুক্ত থাকে।
এই যে রোহিঙ্গার প্রতি মনোভাবের উন্নতি হয়েছিল বলা হচ্ছে কার্যত এমন হতে পারে কিনা জানতে চাইলে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ সামসুদ্দৌজা বলেন, শরণার্থী ও হোস্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে মানসিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দূরত্ব থেকে চাপ কাজ করে। বাইরের লোককে ধারণ করার কোনও ঐতিহাসিক উদাহরণ নেই। বাইরে থেকে আসা মানুষকে আমরা হয়তো নানা পরিস্থিতিতে মেনে নেই কিন্তু অভিযোগ থাকে অনেক। আর রিফ্যুজির ক্ষেত্রে এলাকার যেকোনও নেতিবাচকতার জন্য তাদের দায়ী করার প্রবণতা থাকে। দীর্ঘসময় শরণার্থী কোনও এলাকায় থাকলে পরিস্থিতি ভালোর দিকে যায় এমন না।
এই কথার ছাপ আলোচ্য গবেষণায় পাওয়া যায়। বটের পারফরম্যান্স এবং খেলার সময় কীভাবে ফলাফলকে প্রভাবিত করেছে সেদিকেও গবেষণাটি নজর দিয়েছিল। যখন রোহিঙ্গা বট খারাপ খেলেছিল, তখন খেলোয়াড়রা কম শত্রুতা এবং বেশি ভালো মনোভাব দেখিয়েছিল। কিন্তু যখন বট-টি খুব ভালো পারফর্ম করেছিল, তখন সম্ভবত খেলোয়াড়রা প্রতিযোগিতামূলক বা ঈর্ষান্বিত বোধ করেছিল।
মানসিক চিকিৎসক মেখলা সরকার মনে করেন- এ ধরনের গবেষণা কাজের হতে পারে যদি ধারাবাহিকভাবে তাদের নানা লেসন দেওয়া যায়। দুপক্ষকেই বাস্তবতা বুঝতে হবে। সেটা জোর করে সম্ভব না।