তিন প্রকৌশলীর বদলি

শীর্ষ ছয় প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে তথ্য চেয়ে দুদকে চিঠি, বেবিচকে কানাঘুষা

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) শীর্ষ ছয় প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ থাকলে তা জানাতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি পাঠিয়েছে বেবিচক সদর দফতর। গত ৪ জুন পাঠানো ওই চিঠিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা, তদন্ত বা অভিযোগ থাকলে তা জানাতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে বেবিচকের সদর দফতর, সিলেট ও চট্টগ্রামে কর্মরত তিন প্রকৌশলীকে বদলি করা হয়েছে। ঈদের আগেই এই সিদ্ধান্ত হলেও ঈদের পর অফিস খোলার পর বিষয়টি নিয়ে বেবিচকের প্রকৌশল বিভাগে আলোচনা শুরু হয়েছে। বেবিচক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এই বদলির আদেশ এবং দুদকে পাঠানো চিঠির কপিও বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে। তবে বেবিচক চেয়ারম্যান দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একইসঙ্গে অন্য কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দুদকে পাঠানো চিঠি সূত্রে জানা গেছে, যাদের সম্পর্কে দুদকে তথ্য চাওয়া হয়েছে, সেই কর্মকর্তারা হলেন— বেবিচকের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী জাকারিয়া হোসেন, ই/এম সার্কেল প্রকল্পের (ইলেক্ট্রো মেকানিক) প্রকৌশলী শুভাশীষ বড়ুয়া, ই/এম প্রকৌশলী শাহারিয়ার মোর্শেদ সিদ্দিকি, ই/এম বিভাগ-২ এর প্রকৌশলী হাসান মিয়া, ই/এম বিভাগ-১ এর প্রকৌশলী জাকিয়া সুলতানা এবং সিভিল বিভাগ-১ এর প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম।

চিঠিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনও মামলা, তদন্ত কিংবা অভিযোগ থাকলে তা জানানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তবে একসঙ্গে এই ছয় জনের তথ্য কেন চাওয়া হলো, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।

এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী জাকারিয়া হোসেন এবং শুভাশীষ বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পদোন্নতির প্রক্রিয়ায় এমন তথ্য চাওয়া হয়ে থাকতে পারে। যদিও এদের বিরুদ্ধে বেবিচকের অভ্যন্তরে এখনও পর্যন্ত কোনও বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ আলোচিত হয়নি।

বদলির আদেশে চাঞ্চল্য

এদিকে গত ৩ জুন এক আরও তিন সহকারীকে প্রকৌশলীকে বদলির আদেশ জারি করা হয়েছে। চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া বদলির এই আদেশে সই করেন। এই বদলির আদেশ নিয়েও সদরদফতরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ওই আদেশে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্প (১ম পর্যায়) গোলাম মোস্তফাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বদলি করা হয়। আর শাহ আমানতের সহকারী প্রকৌশলী সাগর দেওয়ানজিকে ওসমানী বিমানবন্দরে। এছাড়াও সদরদফতরের সিভিল বিভাগ-৪ এর সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল আলিমকে সদরদফতরের সিভিল বিভাগ-৩ এ বদলি করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, গোলাম মোস্তফা গত পাঁচ বছর ধরে ওসমানী বিমানবন্দরে কর্মরত ছিলেন। যদিও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা সাধারণত তিন বছরের বেশি এক জায়গায় থাকেন না। এর আগেও তাকে একাধিকবার বদলি করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি সে আদেশ মানেননি। এবারও বদলি হলেও এখনও তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি। বরং বদলি ঠেকাতে বিভিন্নভাবে তদবির করছেন বলেও জানা গেছে।

তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এবং বিষয়টি বিভাগীয় ও দুদক পর্যায়েও তদন্তাধীন রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে গোলাম মোস্তফা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বদলি আদেশ পেয়েছি ঠিকই, তবে জুন মাসে কিছু কাজ রয়েছে। সেগুলো শেষ করেই নতুন কর্মস্থলে যোগ দেবো।’

অন্যদিকে, আব্দুল আলিম বদলির আদেশ পাওয়ার পরপরই সিভিল বিভাগ-৩-এ যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একসঙ্গে একাধিক শীর্ষ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে তথ্য চাওয়া এবং প্রকৌশলীদের বদলি— দুই ঘটনাই বেবিচকে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখন প্রতিদিনই এসব নিয়ে কানাঘুষা চলছে। কেউ কেউ মনে করছেন, বড় ধরনের প্রশাসনিক রদবদলের প্রস্তুতি চলছে।