জামিন পেলেন নোবেল

অপহরণের পর ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ডেমরা থানায় করা মামলায় গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। 

মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুরে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর মেহেরা মাহাবুবের আদালত এই আদেশ দেন।

নোবেলের পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মনির উদ্দিন জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা হওয়ায় আদালত নোবেলকে এক হাজার টাকার মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন। আশা করি, আজকের মধ্যে তিনি কারামুক্ত হবেন।  

শুনানিকালে আসামি নোবেলকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার বাদীও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। নোবেলকে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বাদীর সঙ্গে খোশগল্প করতে দেখে গেছে।

জামিন শুনানিতে নোবেলের আইনজীবী মোহাম্মদ মনির উদ্দিন বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা হয়ে গেছে। আসামি জামিন পেলে বাদীর কোনও আপত্তি নেই। বাদী আদালতে উপস্থিত আছেন।

তখন বিচারক বাদীকে জিজ্ঞেসা করেন, আপনাদের মধ্যে কি আপোষ হয়েছে? আসামি জামিন পেলে কি আপনার কোন আপত্তি আছে? 

তখন বাদী বলেন, না স্যার। আমার কোনও আপত্তি নেই। 

এরপর বিচারক বলেন, জামিনের দরখাস্তে সেই কথাটা লিখে দেন। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। 

গত ১৮ জুন ঢাকার মহানগর হাকিম নাজমিন আক্তারের আদালত গায়ক নোবেল ও ওই তরুণীর পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বিয়ে সম্পন্ন করে তা আদালতকে জানানোর নির্দেশ দেন। পরদিন কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে কারা ফটকে নোবেলের সঙ্গে ধর্ষণ মামলার বাদী সেই নারীর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

এর আগে, গত ১৯ মে দিবাগত রাত দুইটার দিকে ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টারের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। 

মামলার অভিযোগে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুক্তভোগী ইডেন কলেজের ছাত্রীর সঙ্গে নোবেলের পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত বছরের ১২ নভেম্বর নোবেল তার স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ওই ছাত্রীকে ডেমরা থানাধীন তার বাসায় নিয়ে যায়। এরপর কয়েকজন আসামির সহায়তায় আটকে রাখে। সেদিন রাত অনুমান ৮টার সময় ওই ছাত্রীর মোবাইল নিয়ে নেয়। সে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য নোবেলকে মোবাইল ফেরত দিতে বলে। কিন্তু নোবেল ২৬ হাজার টাকার রেডমি-১০ প্রো মোবাইলটি ভেঙে ফেলে।

এরপর নোবেল তার বসতঘরে আটক রেখে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং এর ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে। নোবেলের কথামতো বাসায় না থাকলে তার মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে বলে জানায়। তাই বাদী আসামির ভয়ে কাউকে কোনও কিছু বলার সাহস পায়নি। 

এরপর আসামি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিভিন্ন তারিখ ও সময় বাদীকে মারধর করতো। আসামি তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জনের সহায়তায় বাদীকে চুলের মুটি ধরে টেনেহিঁচড়ে অপর একটি কক্ষে আটক করে রাখে। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বাবা-মা বাদীকে চিনতে পারে। এরপর বাদীর বাবা-মা তাকে খোঁজাখুঁজি করা অবস্থায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিলে গত ১৯ মে রাত সাড়ে ৯টায় নোবেলকে গ্রেফতার এবং তাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ডেমরা থানায় অপহরণের পর ধর্ষণের অভিযোগে নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

২০২৩ সালের ২০ মে আরও একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন জনপ্রিয় এই গায়ক। টাকা নিয়ে গান গাইতে না যাওয়ার অভিযোগে করা প্রতারণার মামলায় সেবার তাকে গ্রেফতার করেছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।