সাইফুল আলমের বিদেশে থাকা ২৪ কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান থাকায় আলোচিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের নিজ নামে থাকা সাইপ্রাসের দুই তলা একটি বাড়ি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া  সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে থাকা ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপে ১৮ কোম্পানি ও যুক্তরাজ্যের ৬টি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের পৃথক তিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের উপপরিচালক তাহসিন মুনাবিল হক এ আবেদন করেন।

ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া দ্বীপপুঞ্জের রেকর্ড অনুযারী সাইফুল আলম ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ১৮টির কোম্পানির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে— হ্যাজেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। যার মূল্য তিন লাখ ৫০ হাজার ডলার। এর মধ্যে মোহাম্মদ সাইফুল আলমের নামে শেয়ার ৭০ শতাংশ, আর তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে আছে ৩০ শতাংশ। অন্যান্য কোম্পানি হচ্ছে—  পিকক প্রোপার্টি হোল্ডিং লিমিটেড, এডায়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ক্যানালি লজিস্টিক লিমিটেড, গোল্ডেন ট্রায়াল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, হ্যামিল্টন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, হ্যানিয়েল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, লিনেয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, লু সু ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ম্যারিকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, পিটসডেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, কিং সু ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, স্প্রিং ফিল্ড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ট্রিবোলি ট্রেডিং লিমিটেড, ওয়েবপেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও জেনিতা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।

ব্রিটেনে সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন জার্সি ট্রাস্ট কোম্পানির অধীনে ছয়টি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠান গঠন করেছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— ম্যাপল ট্রাস্ট, যার মূল্য ২১ কোটি ডলার। এছাড়া  ক্যাপরি ট্রাস্ট, স্যারি ট্রাস্ট, শ্যান্টন ট্রাস্ট,ম্যারিনা ট্রাস্ট, মিশন ট্রাস্টের মালিকও তারা  

উল্লেখ্য, গত ১৭ জুন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ১৮০ কোটি ৬১ লাখ টাকা দলিল মূল্যর ২০০ দশমিক ২৬ একর জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। গত ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে থাকা ৫৬৩ দশমিক ৫৭ একর জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব জমির দলিল মূল্য ধরা হয়েছে একহাজার এক কোটি ৭৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। ২৩ এপ্রিল তার ৪০৭ কোটি টাকা মূল্যের ১৫৯ একর জমি, গত ১৭ এপ্রিল এস আলমের এক হাজার ৩৬০টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত। এসব হিসাবে দুই হাজার ৬১৯ কোটি সাত লাখ ১৬ হাজার টাকা রয়েছে। গত ১০ মার্চ এস আলমের এক হাজার ছয় বিঘা জমি, গত ৯ এপ্রিল তার ৯০ বিঘা জমি জব্দের আদেশ এবং একইদিন আদালত তার ঘনিষ্ঠজনদের নামে থাকা ৩৭৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাদের আট হাজার ১৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা মূল্যের শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ৩৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৬৩ হাজার পাঁচশো টাকা মূল্যের ১৭৫ বিঘা সম্পদ জব্দের এবং গত ১২ ফেব্রুয়ারি ৪৩৭ কোটি ৮৫ লাখ ২ হাজার ২৭৪ টি শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব শেয়ারের মূল্য ৫ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। গত ১৬ জানুয়ারি এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজার টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ, গত ৭ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ তার পরিবারের ১২ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।