দেশে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন ও বাকস্বাধীনতা হরণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ৮৮ জন প্রবাসী সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিক্ষক-গবেষক, সংস্কৃতি ও অধিকারকর্মী। বুধবার (২ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, সাংবাদিকদের ওপরে নির্যাতন-নিপীড়ন, চাকরিচ্যুতি ও গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ ও কলম থামিয়ে দেওয়ার এমন ঘটনা অতীতে ঘটেনি। আমরা সাংবাদিকদের ওপর নজিরবিহীন নির্যাতন ও বাকস্বাধীনতা হরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা প্রবাসী সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিক্ষক-গবেষক, সংস্কৃতি ও অধিকারকর্মীরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি— গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে সাংবাদিকদের ওপরে নেমে এসেছে অবর্ণনীয় নির্যাতন। একইসঙ্গে আজকের বাংলাদেশে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমেও মতপ্রকাশের নানারকম ‘লিখিত ও অলিখিত’ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে বাকস্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে, যা আমাদের কাছে অত্যন্ত লজ্জাজনক ও ঘৃণ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত। আমরা প্রবাসে বসবাস করলেও বরাবরের মতোই দেশের ভালোমন্দ নিয়ে উৎকণ্ঠিত থাকি। সে কারণে দেশের অমঙ্গলের সমালোচনা ও প্রতিবাদ করা নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিগত ১১ মাসে অন্তত ৪১২ জন সাংবাদিককে হত্যা মামলাসহ হয়রানিমূলক নানা ধরনের মামলায় আসামি করা হয়েছে। ৩৯ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ, হেনস্তামূলক দুর্নীতির মামলা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমশিনে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকাসহ সারা দেশে অনেক সাংবাদিককে চাকরচ্যুত, ১৬৮ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল, জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ সারা দেশের প্রেসক্লাবগুলো থেকে ১০১ জন সাংবাদিকের সদস্যপদ স্থগিত, বাতিল ও বহিষ্কার এবং মিডিয়া দখলের মতো নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে।
এতে বলা হয়, জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে ১০ জন সাংবাদিক নিহত এবং অনেক সাংবাদিক আহত হলেও সরকারের তরফ থেকে আক্রান্ত সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের প্রতি কোনও সহযোগিতার হাত প্রসারিত হয়নি। এসব নির্যাতন ও নিপীড়নের ফলে অনেক সাংবাদিক ও তাদের পরিবার অবর্ণনীয় মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কষ্ট ভোগ করছে এবং মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
বিবৃতিদাতারা মনে করেন, এসব নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ড মূলত বাক্স্বাধীনতাকে হরণ করছে, যার ফলে সর্বত্র দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
বিবৃতিদাতারা মনে করেন, এসব নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ড মূলত বাক্স্বাধীনতাকে হরণ করছে, যার ফলে সর্বত্র দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এমনকি, এসব ঢালাও মামলা ও চাকরিচ্যুতিসহ অন্যান্য নির্যাতনমূলক ঘটনার প্রতিকারে সরকারের তরফ থেকে কোনও উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি, বরং উল্টোটাই দেখা গেছে। বাংলাদেশে এখন একটি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এবং শান্তিতে নোবেল বিজয়ী একজন ব্যক্তি সরকারপ্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন। তা ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরাও অতীতে সাংবাদিকদের অধিকার সুরক্ষায় সোচ্চার ছিলেন। অথচ আজকে সাংবাদিক নির্যাতন ও বাক্স্বাধীনতা হরণের ঘটনা ঘটছে, যা আমাদেরকে হতাশ ও আহত করেছে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন— যুক্তরাজ্য বসবাসরত সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক ড. মুকিদ চৌধুরী, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক সুজাত মনসুর, সাংবাদিক আশেকুন নবী চৌধুরী, সাংবাদিক ও সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশা, সাংবাদিক ও ইউকে বিডি টিভি’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মকিস মনসুর, সাপ্তাহিক সিলেটের ডাকের সাবেক সম্পাদক সৈয়দ এনামুল ইসলাম, কবি টি এম আহমদ কায়সা, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার কর্মী জেসমিন চৌধুরী, কবি সফিয়া জাহির , সাংবাদিক ও ছড়াকার সৈয়দ হিলাল সাইফ, আইনজীবী ও অধিকার কর্মী ড. রায়হান রশিদ, আইনজীবী ও অধিকার কর্মী ড. নওরীন তামান্না, আইনজীবী ও অধিকারকর্মী ওয়ার্দা ইসলাম, সাংবাদিক মুরসালিন মিজান, অধিকারকর্মী তুষার আহমেদ, সাংবাদিক ও কবি হামিদ মোহাম্মদ।
আরও স্বাক্ষর করেছেন সুইডেন প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখক সাব্বির খান, লেখক আকতার জামান, সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন, সাংবাদিক জাহানারা নুরী, জার্মানি প্রবাসী ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্ট বাঁধন মুন্সি, অধিকার কর্মী মারজান প্রধান, সুইজারল্যান্ড প্রবাসী ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্ট আজম খান, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক ও বিজ্ঞানী বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরুন নবী, বিজ্ঞানী ও সমাজচিন্তক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. জিনাত নবী, লেখক ও গবেষক ওবায়দুল্লাহ মামুন, গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম, কলামিস্ট ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাহমুদউল্লাহ, কলামিস্ট ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত বিশ্বাস, সাংবাদিক ও উপস্থাপক তৈমুর ফারুক তুষার, কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক ও নতুন দেশ প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, সাংবাদিক ফজলুল বারীসহ আরও ৫৪ জন প্রবাসী সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিক্ষক-গবেষক, সংস্কৃতি ও অধিকার কর্মী।