সম্প্রতি গবেষণাটির ফলাফল বিএমসি ওবেসিটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, গবেষণার আওতাভুক্ত ১৬ হাজার ৪৯৩ জন নারীর মধ্যে ১৮ শতাংশই অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী অথবা স্থূল।
শহরে বসবাসরত নারীদের মধ্যে শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে যুক্ত নারীদের চেয়ে পূর্ণ মাত্রার কর্মজীবী নন এমন নারীরা বেশি স্থূল। তারা অতিরিক্ত ওজনের শিকার হওয়ার দেড় গুণ (১.৪৪ গুণ) বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। শহর ও গ্রাম উভয় জায়গার ধনী ও সয়ংসম্পূর্ণ পরিবারের নারীরা অধিক ওজন এবং স্থূল হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন।
আইসিডিডিআরবি’র পুষ্টি এবং ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক এবং এই গবেষণার জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, স্থূলতার এ উচ্চমাত্রা আমাদের দেশের চিকিৎসা বাজেটে প্রভাব ফেলবে। যদি এর মোকাবেলা করা না হয়, তবে অধিক ওজন এবং স্থূলতা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, হৃদরোগ ইত্যাদি বাড়বে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, প্রতিবছর কমপক্ষে ২৮ লাখ মানুষ অধিক ওজন এবং স্থূলতার কারণে মারা যায়। বিশেষ করে নারীদের জন্য স্থূলতা নানাভাবে ক্ষতিকর হতে পারে। স্থূলতার কারণে তারা ডায়াবেটিস এবং অ্যান্ডমেট্রিয়াল ক্যান্সার, জরায়ু-মুখ ক্যান্সার, স্তুন ক্যান্সার, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের মতো বিভিন্ন ধরণের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে বলে প্রমাণিত।
২০১৬ সালে আইসিডিডিআরবি’র পুষ্টি প্রোগ্রামের প্রধান হরিবন্ধু শর্মা, আইসিডিডিআরবি ও আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীদের নিয়ে ১৮ থেকে ৪৯ বছরের নারীদের (যারা বর্তমানে বিবাহিত বা পূর্বে ছিলেন) অধিক ওজন এবং স্থূলতা সংশ্লিষ্ট কারণগুলো চিহ্নিত করার জন্য বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১১’র পুষ্টি সংক্রান্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করেন।
প্রধান গবেষক হরিবন্ধু শর্মার মতে, স্থূলতা সমস্যার ক্রমবর্ধমান অবস্থা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জনস্বাস্থ্যখাতের জন্য হুমকি স্বরূপ। ঐতিহ্যগতভাবে স্থূলতা এবং অধিক ওজনের সমস্যা ব্যাপক অর্থে ধনী দেশগুলোর সমস্যা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেও এর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এ দেশগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সাধারণত অপুষ্টি এবং সংক্রামক রোগ মোকাবেলায় সম্পদ ব্যয় করার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু যেহেতু তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়ছে তাই তাদের অবশ্যই পুষ্টি সংশ্লিষ্ট অসংক্রামক রোগ ব্যবস্থাপনায়ও মনোনিবেশ করতে হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামীণ এলাকার চেয়ে শহুরে এলাকায় স্থূলতা এবং অধিক ওজনের প্রাদুর্ভাব বেশি। তবে শর্মা মনে করেন বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে এই সমস্যার গভীরতা বোঝার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে। তিনি বাংলাদেশের পরবর্তী ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভেতে স্থূলতা সংশ্লিষ্ট সূচকসমূহ যেমন শারীরিক কার্যকলাপ, টিভি দেখার সময়কাল, কিভাবে প্রাপ্তবয়স্করা অবসর সময় কাটায় এবং খাদ্যগ্রহণ বিষয়ক তথ্য সংগ্রহের ওপর গুরুত্ব দেন।
স্থূলতা মোকাবেলায় স্কুল-কলেজে, কর্মক্ষেত্রে ও সর্বোপরি সমাজে স্থূলতার পরিণতি, শারীরিক কর্মকাণ্ডকে উদ্বুদ্ধ করা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্থূলতা প্রতিরোধ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা দরকার এবং অধিক ওজনের সমস্যা মোকাবেলায়, বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় পুষ্টিগত অবস্থা প্রতিনিয়ত পদ্ধতিগত মূল্যায়ন ও নজরদারির মধ্যে নিয়ে আসা গুরুত্বপূর্ণ বলেও শর্মা অভিমত দেন। সূত্র: বাসস।
/এফএস/