খাদ্য সহায়তা নিতে গাদাগাদিতে সংক্রমণের ঝুঁকি

 

গেট বেয়ে উঠে ত্রাণ নেওয়ার চেষ্টা

গাড়ি, অফিস আদালত বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও রিকশাচালকরা। রিকশা বের না করলে আয় নেই। আবার একশ’ টাকা জমা দিয়ে রিকশা নিয়ে বের হলেও রাস্তায় যাত্রী নেই। কেউ প্রয়োজনে বের হলে তাকে যাত্রী হিসেবে পেতে সামনে এসে হাজির হয় কয়েকটি রিকশা। এ পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই যেকোনও সংবেদনশীল মানুষ তাদের পাশে দাঁড়াতে চাইবেন।

কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা এবং এ ধরনের চাল-ডাল দান করার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রতিদিনই ঘটছে বিপত্তি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে বাসাবাড়ির বাইরে শত শত খেটে খাওয়া মানুষ, কোনও সামাজিক দূরত্ব বলে কিছু নেই। একজন আরেকজনের কাঁধে হাত দিয়ে অপেক্ষা করছেন—কখন গেট খুলে চাল, ডাল, আলুর প্যাকেটটা হাতে দিতে কেউ এগিয়ে আসবেন। চিকিৎসকরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে বড় বিপদ হয়ে যেতে পারে। গণজমায়েত যাতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে সাধারণ ছুটি দেওয়া হলো। কিন্তু জনসেবার নামে যদি এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয় তা দুঃখজনক।

খাদ্য সহায়তা নিতে গাদাগাদিতে

রাজধানীর লালমাটিয়ার বি ব্লকে দুপুর তিনটার দিকে দেখা গেল প্রায় অর্ধশত রিকশার সারি। রিকশা লাইন ধরে রেখে চালকরা ভিড় করে আছেন একটি কালো গেটের সামনে। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতে হেকমত নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘ত্রাণ দেবে। পেটের খিদায় মানুষ খুন করে ম্যাডাম। আমি কোনোদিনও ভাবি নাই আমারে এভাবে ভিক্ষা করতে নামতে হবে।’ পাশেই কেউ একজন বলতে থাকেন, ‘একঘণ্টা ধরে দাঁড়ায়ে আছি। কখন দেবে কে জানে? আপনি দেবেন নাকি কিছু টাকা? চাল কিনতাম।’

টেলিভিশনে সবসময় নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে দাঁড়ানোর কথা বলছে, হাত ধোয়ার কথা বলছে, মাস্ক পরতে বলছে, আপনারা শুনেছেন? আপনাদের মাস্ক নেই কেন—জিজ্ঞেস করতে তিনি হেসে বলেন, ‘মাস্ক পরে এই রোদে দাঁড়ায়ে থাকা যায়? আর কীসের দূরত্ব? ও তো আমার ভাইরা-ভাই ম্যাডাম।’

ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে বেলা ৪টার দিকে দেখা যায় একইরকম রিকশার ভিড়। বাসাবাড়িতে কাজ করেন এমন নারীরাও জড়ো হয়েছেন সেখানে। একটা গেট বেয়ে কিছু মানুষকে উঠতে দেখা যায়। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতে এক রিকশাচালক বলেন, ‘ত্রাণ দেবে বলে শুনেছি। ২০-২৫ জন নিতেই গেট লাগিয়ে দিয়েছে। আমাদের আয় রোজগার নেই।’ এ সময় গেটটা আবারও খুলে দেওয়া হলে জনা পঞ্চাশেক মানুষ একসঙ্গে ঢোকেন। একপর্যায়ে পর্যাপ্ত ত্রাণ না থাকায় ত্রাণদাতা গেট লাগিয়ে দিতে গেলে কাড়াকাড়িতে চাল-ডাল সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়।

খাদ্য সহায়তা নিতে গাদাগাদিতে

ক’দিন ধরে বস্তিবাসীদের চাল-ডালের বিতরণ করছেন ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যদি এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ দেওয়া হয় তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। ব্যক্তিগতভাবে যারা উদ্যোগ নিয়েছেন তারা কেউই সবার চাহিদা পূরণের মতো সরবরাহ নিয়ে যান না। ফলে কাজটা হতে হবে পরিকল্পিতভাবে।’

ত্রাণ নেওয়ার নামে যদি এত মানুষ একসঙ্গে জড়ো হয় তাহলে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ আরও কঠিন হবে বলে উল্লেখ করেন ভাইরোলজিস্ট জাহিদুর রহমান খান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ত্রাণ বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে। না হলে সংক্রমণ হবে। সব হতে হবে মোবাইল সার্ভিস। একত্রিত হলেই তো বিপদ। ত্রাণ নিতে যারা আসবেন তাদের মধ্যে কেউ আক্রান্ত নন এইটা কী করে বুঝবেন? আমার পরামর্শ হলো, এখন কোনও কিছু নিয়ে বড়াই করার বা শো-অফের সময় নয়। ঘোষণা করে ডেকে এনে লোক জড়ো করার মতো পরিস্থিতি নয়।’

1