‘ভালোবাসা দিবস ও ফাল্গুন বোঝাই যাচ্ছে না’

ফুল বিক্রির ধুম পড়তো এ দিন। করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে ফুলের বিক্রি তলানিতে ঠেকেছে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিকের দিকে থাকলেও বিক্রি নেই আগের মতো। শাহবাগের ফুল বিক্রেতা ইনামুল হক বলছেন, ‘আজ যে পয়লা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস তা বোঝাই যাচ্ছে না। ফুল কিনতে মানুষ আসছেই না। আগের মতো উৎসবের আমেজও নেই।’

ফুল বিক্রেতারা বলছেন, আগে পয়লা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে কাস্টমাররা এসে তাদের দারুণ ব্যস্ত রাখতো। এখন তারা উল্টো ক্রেতার অপেক্ষায় আছেন। দুয়েকজন আসলেও ফুল বিক্রির জন্য প্রতিযোগিতায় নামতে হয়।

রাজধানীর শাহবাগের ফুলের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে দোকান খুলে অপেক্ষা করছেন বিক্রেতারা। ভিড় নেই বলতে গেলে। কিছুক্ষণ পর পর কয়েকজন ক্রেতা আসছেন। কেউ দুয়েকটা ফুল নিচ্ছেন, কেউ দাম জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছেন।

ফুলের দোকানে অন্যান্য বছর ভিড় থাকলেও, এবার ক্রেতা কমএদিকে, পয়লা ফাল্গুনে এবার নেই কোনও আয়োজন। আগেই জানা হয়ে গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় এবার হচ্ছে না বসন্ত বরণ।

ফুলতলা ফ্লাওয়ার শপের নিয়াজ মাহমুদ বলেন, ‘এখন বিক্রি কম। আশা করছি বিকালের দিকে কিছুটা বাড়বে। করোনা পরিস্থিতিতে আমরা ফুল ব্যবসায়ীরা খুব খারাপ অবস্থায় ছিলাম। যেকোনও অনুষ্ঠানের সঙ্গেই তো ফুলের বিক্রি বেশি হয়। করোনার জন্য অনুষ্ঠান না হওয়ায় ফুলও বিক্রি হয়নি।’

নিউ ফুলতলা ফ্লাওয়ার শপের হালিম আজাদ বলেন, ‘ফুলের দাম এখন কিছুটা কম। এ বছর খুব লোকসান হয়েছে। আশা করছি বিকালের দিকে বিক্রি বাড়বে। কিন্তু ওই সময়ে যদি ডিএমপি কমিশনার থেকে দোকান বন্ধ করতে বলে, তবে আমাদের বেশ ক্ষতি হয়ে যাবে।’

শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের ৫১টি দোকানের মধ্যে ৩৫টি দোকান বন্ধ আছে। তারা লোকসানে পড়ে অন্য ব্যবসা শুরু করেছে। করোনার মধ্যে অনেকে প্রণোদনা পেলেও ফুল ব্যবসায়ীরা পায়নি।’

শাহবাগের ফুটপাতে থাকছে না ফুলের দোকান

শাহবাগে ফুটপাতে অবস্থিত ফুল বাজারের জন্য পাশেই একতলা ভবন নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক গত মঙ্গলবার ফুল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দেখা করে তাদের আলাদা ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হবে বলে জানান। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ভবনটি স্থায়ীভাবে ফুল ব্যবসায়ীদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ। এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তারা।

ক্রেতা কম ফুলের দোকানেশামীম আহমেদ জানান, ‘মন্ত্রী আমাদের সঙ্গে দেখা করে বলেছেন, শাহবাগের যারা স্থায়ী দোকানদার, তাদের পুনর্বাসন করে একটি মার্কেট তৈরি করে দেবেন।’

যারা স্থায়ী দোকানদার শুধু তারাই নতুন মার্কেটে বরাদ্দ পাবেন। বাকিদের উচ্ছেদ করা হবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ফুল ব্যবসায়ী জানান, ‘আমরা যারা দীর্ঘদিন এখানে ব্যবসা করে আসছি তাদের নাকি উচ্ছেদ করা হবে। আমরা নিশ্চিত বেকার হয়ে যাব। এতদিনের পেশা ছেড়ে অন্য পথ ধরতে হবে।’