যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি, যাক অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক, যাক যাক এসো এসো... এসো হে বৈশাখ, এসো এসো। বৈশাখ এসে গেছে, কিন্তু আসেনি বৈশাখের সেই চিরচেনা রূপ। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ, মঙ্গল শোভাযাত্রা কিংবা উৎসবের আমেজ কোনও কিছু নেই। যেন বৈশাখে খরা নেমে এসেছে পৃথিবীতে। দেশে করোনার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সব ধরনের অনুষ্ঠান ও জনসমাগম নিষিদ্ধ করায় হরেক রঙয়ের এই উদযাপনে নেমে এসেছে বিষাদের কালো ছায়া।
পহেলা বৈশাখের ভোরে যেখানে ব্যাপক আয়োজন করে বরণের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ছিল, সেই বরণ হয়ে গেছে নীরবেই। করোনা পরিস্থিতির কারণে রমনা বটমূল ছিল এদিন নিষ্প্রাণ। চারুকলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে সীমিত আকারে হয়েছে মঙ্গলশোভা যাত্রা। চারুকলা অনুষদের শিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন মুখোশ ও প্রতীক নিয়ে অনুষদ প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সংক্ষিপ্তভাবে প্রতীকী মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রতীকী এই শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন।
সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘চলমান করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে এবছর পহেলা বৈশাখ উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা আশা করি, আগামীতে করোনা উত্তর বাংলাদেশে আগের রূপে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে সক্ষম হবো।’
করোনাকালে বৈশাখ প্রাণহীন এক বৈরী পরিবেশ ও জীবনের নিষ্ঠুর বাতাবরণে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘চিরচেনা পহেলা বৈশাখকে আজ চেনাই যায় না। এই দিনের সব রূপ-রস-গন্ধ হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে হাসি আনন্দের চিরচেনা বাঁশির সুর।’
কাদের বলেন, ‘সর্বজনীন বৈশাখী আবেগ উচ্ছ্বাস হারিয়ে গেছে মহামারি করোনার আতঙ্কের অন্ধকারে। তবুও নতুন আশার মালা গেঁথে বাঙালির বেঁচে থাকার নিরন্তর লড়াই চলছে।’
এদিকে সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সুনসান নীরবতা। রাজধানীর শাহবাগ, মিরপুর রোড, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, পল্টন, কাওরানবাজার সর্বত্রই বিরাজ করছে একই চিত্র।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম