ডিএসসিসির করোনা হাসপাতাল ঝুলে আছে কেন?

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের চালু হওয়া একটি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের কার্যক্রম ঝুলে আছে প্রায় সাড়ে ৫ মাস ধরে। করোনা ডেডিকেটেড হিসেবে চালু হলেও চিকিৎসা এখন বন্ধ।

গতবছর প্রথম শনাক্তের পরই ১৫০ শয্যার হাসপাতালটির ১০০ শয্যা করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়। তখন হাসপাতালের অন্য চিকিৎসা সেবাও বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু এবছর মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ প্রকট রূপ নিলেও হাসপাতালটির করোনা বিভাগ চালু হয়নি।

কর্তৃপক্ষ বলছে, গতবছরের বকেয়া পরিশোধ করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রথম থেকে চিকিৎসায় যুক্ত থাকা ডাক্তার-নার্সরাও প্রণোদনার অর্থ পাননি। তাছাড়া সরঞ্জামের ঘাটতিও রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৫০ শয্যার হাসপাতালটি পরিচালনা করে ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ।

জানা গেছে, গতবছর মহামারি দেখা দেওয়ার পর পুরান ঢাকার বাবুবাজার ব্রিজের গোড়ায় ডিএসসিসির মহানগর জেনারেল হাসপাতালটির নিয়মিত চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখে শুরু হয় করোনার চিকিৎসা। ওই বছরের ২৫ মার্চ করোনা-আউটডোর চালু করেন তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। ৮ এপ্রিল শুরু হয় ইনডোর ইনফেকশন ডিপার্টমেন্ট। এই সময়ে ৪৯৮ জন করোনা রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থও করে তোলা হয়। সাড়ে ৫ হাজারের মতো রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয় আউটডোরে।

এখন করোনার চিকিৎসা চালু হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে হাসপাতালটির দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসকরা জানান, তাদের জন্য প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়া হলেও তারা কোনও অর্থ পাননি। করোনার চিকিৎসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রায় দুই কোটি টাকার মতো খরচ হয়। সেটা পুরোপুরি পরিশোধ করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ডিএসসিসি মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দিয়েছে- বকেয়া পরিশোধ না করলে এ বছর আর করোনা চিকিৎসা শুরু হবে না।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতবছর তারা আইসিইউ ও অক্সিজেন সাপ্লাই ছাড়াই চিকিৎসায় ভালো ফল পেয়েছিলেন। এ বছর ৫টি ভেন্টিলেটর এবং ১৫টি হাইফ্লো অক্সিজেন বেড তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি সাধারণ ওয়ার্ডেও ১০টির মতো হাই ফ্লো অক্সিজেন বেড থাকবে।

জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক প্রকাশ চন্দ্র রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে এখন করোনা রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে না। তবে মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এর জন্য অক্সিজেন প্লান্ট লাগবে, আইসিউ দিতে হবে। এগুলো বসানোর কাজ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের কাছে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। গতবছর যেখানে চাহিদার আগেই আমাদের ডেকে ডাক্তার-নার্স দেওয়া হয়েছে, সেখানে এবছর চাহিদা দেওয়ার পরও পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের ডাক্তারদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছিল না। করোনা ডেডিকেটেড হিসেবে চালু করতে হলে পর্যাপ্ত আনসার দিতে হবে। যন্ত্রপাতি দিতে হবে।’ জানালেন ডা. প্রকাশ চন্দ্র রায়।

তিনি আরও বলেন, ‘গতবছর অনেক কম খরচে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় আমাদের রোগী সুস্থতার হারও ভালো ছিল। কিন্তু আমাদের যে বিল এসেছে তা এখনও পাইনি। মন্ত্রণালয়ের কাছে ৭২ লাখ টাকা বকেয় আছে। ডাক্তাররাও প্রণোদনার অর্থ পাননি।’

জানা গেছে,  হাসপাতালটিকে পুনরায় করোনা ডেডিকেটেড বানাতে ৫৬ জন মেডিক্যাল অফিসার ও ৬০ জন নার্সের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডে ৪০ জন ডাক্তার এবং ৪০ জন নার্স এবং আইসিইউর জন্য ১৬ জন ডাক্তার ও ২০ নার্স কাজ করবেন। এ ছাড়া কিছু টেকনোলজিস্ট, ওয়ার্ড বয় ও ক্লিনারের চাহিদাও দেওয়া হয়েছে।

ডা. প্রকাশ জানালেন, ‘এ বছর ৫টি ভেন্টিলেটর স্থাপন করা হয়েছে। তবে করোনা রোগীদের জন্য ভেন্টিলেটর তেমন একটা লাগে না। দরকার হাই ফ্লো অক্সিজেন বেড। আমরা সব মিলিয়ে ৩০টির মতো বেড বানানোর চেষ্টা করছি। এর মধ্যে ১২টি এসিযুক্ত আলাদা ওয়ার্ডে থাকবে। বাকি ১৮টি কেবিন ও ওয়ার্ডে যুক্ত করে দেবো।’