কোথায় লকডাউন?

করোনার সংক্রমণ রোধে সারা দেশে দুই দফায় ১৪ দিন লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। তবে লকডাউনের প্রথম দিকে যান চলাচলে কিছুটা কড়াকড়ি থাকলেও তা ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে পড়েছে। খোলা রয়েছে কলকারখানাসহ বেসরকারি অফিস। সড়কে বাস ছাড়া সবধরনের পরিবহন চলছে। শুধু প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে পুলিশের কয়েকটি চেক পোস্ট থাকলেও অলিগলিতে তার কোনও প্রভাব নেই। নাগরিকদের জীবন চলছে অনেকটাই স্বাভাবিক।

সরকারের ঘোষিত লকডাউনের বিধিনিষেধ অনুযায়ী, সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কথা থাকলেও বেসরকারি অফিসগুলো তা মানছে না। সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকার কথা বলা হলেও রিকশা, ভ্যান, সিএনজি, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকল ও কাভার্ড ভ্যানে যাত্রী পরিবহন অব্যাহত রয়েছে। শিল্প-কারখানাগুলোতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের পরিবহন করার নির্দেশনা থাকলেও কেউ তা মানছে না।এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ফলে সকালে অফিসের সময় ও বিকালে অফিস ছুটির পর কর্মজীবী মানুষেরা আগের মতোই ভোগান্তিতে পড়ছ্নে। দিনভর ট্রাফিক সিগন্যাল ও পুলিশের চেকপোস্টগুলোতে থাকে যানবাহনের চাপ।

হাতিরঝিলের রামপুরা ব্রিজ অংশের চেক পোস্টে দায়িত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  আমারা যাদেরই ধরি, সরকারি প্রজ্ঞাপনের শর্তের আওতায় সবাই পড়ে যান। তখনতো কাউকে বারণ করা যায় না। এ কারণে যানবাহনের চাপ বেশি।

লকডাউনেও থেমে নেই ইফতারি কেনাশুধু তাই নয়, অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা, চিকিৎসা সেবা, মরদেহ দাফন বা সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না, তবে টিকা কার্ড দেখানো সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে— প্রজ্ঞাপনে এমন কঠোর শর্ত থাকলেও কোথাও তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরীর অলিগলিতে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। পাড়া মহলার প্রতিটি দোকানপাট খোলা থাকতে দেখা যায়।

সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে কাঁচাবাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত থাকলেও ভোর থেকে রাত অবধি এসব বাজারে কেনাবেচা চলে। কোথাও উন্মুক্ত স্থানে কাঁচাবাজার স্থানান্তর করা হয়নি। রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় লেগেই আছে। সেখানে কোনও নিয়ন্ত্রণ দেখা যায়নি। তদারকি নেই সিটি করপোরেশনেরও।

শর্ত অনুযায়ী, সকাল ৬টা থেকে দুপর ১২টা এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খাবারের দোকান ও হোটেল রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার কথা। কিন্তু অলিগলির প্রায় প্রতিটি দোকান ও রেস্তোরাঁ সব সমইয় খোলা থাকতে দেখা গেছে। মসজিদগুলোতে জুমা ও তারাবির নামাজেও ‍উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। এসব তদারকি করতে সিটি করপোরেশনের হাতে গোনা কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত ছাড়া আরও কোনও তদারকি দেখা যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্যাহ নুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লকডাউনে আমাদের ওপরে যেসব দায়িত্ব রয়েছে, সেগুলো আমরা পালন করছি। এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পুলিশ, জেলাপ্রশাসনসহ অন্য সংস্থাগুলোও কাজ করছে। আমাদের সকল আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ভ্রাম্যামাণ আদালত পরিচালনা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছেন।’

ছবি: নাসিরুল ইসলাম