প্রকল্প টেকসই না হলে তা দীর্ঘ মেয়াদে কল্যাণ বয়ে আনবে না: বিআইপি

প্রকল্প টেকসই না হলে তা দীর্ঘ মেয়াদে দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারবে না। টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে আমাদের এমন কোনও প্রকল্পের বরাদ্দ দেওয়া উচিৎ হবে না, যা আমাদের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) উদ্যোগে অনলাইন প্লাটফর্মে ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২: পরিকল্পনাগত পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সংলাপে এসব কথা বলা হয়।

এসময় বাস্থ্যখাতে আরও বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ও পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, এই খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো প্রয়োজন, পাশাপাশি প্রাথমিক স্বাস্থ্য খাতে এবং বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের সক্ষমতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত বাজেট নিশ্চিত করবার মাধ্যমে পরিকল্পিত উন্নয়নে কাজ করতে হবে। টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে আমাদের এমন কোন প্রকল্পের বরাদ্দ দেওয়া উচিৎ হবে না, যা আমাদের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। প্রকল্প টেকসই না হলে তা দীর্ঘ মেয়াদে দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারবে না।

অধ্যাপক আদিল আরও বলেন, বাজেটে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবিকাকে গুরুত্ব দেবার কথা বলা হলেও সামাজিক খাতে বরাদ্দের কতটুকু প্রকৃত দরিদ্রদের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে, সে বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে।

কেয়ার বাংলাদেশের পরিচালক পরিকল্পনাবিদ আমানুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের কাছে বাজেটের অর্থ বরাদ্দ পৌঁছানোর কথা বলা হলেও বাস্তবিক অর্থে বাজেটের বরাদ্দ সকল শ্রেণির মানুষের কাছে পৌছাচ্ছে না। স্বাস্থ্যখাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও স্বাস্থ্যখাতের সকল সুযোগ-সুবিধা কেন্দ্রীকরণের ফলে সুষমভাবে বন্টন হচ্ছে না। নিম্নবিত্তদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ অপর্যাপ্ত এবং বাজেটে নতুন দরিদ্র মানুষদের উপেক্ষা করা হয়েছে।

বিআইপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ খোন্দকার এম আনসার হোসেন বলেন, একীভূত উন্নয়নের ফলে অন্যান্য শহরগুলো তার জীবিকা, অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ জীবনমান হারাচ্ছে এবং উন্নয়ন ঢাকা শহরকেন্দ্রিক হচ্ছে। অথচ টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা ও উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছানোর জন্য যে লক্ষ্যমাত্রাগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে এর জন্য সমগ্র বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন প্রয়োজন।

জাইকা বাংলাদেশের জাতীয় পরামর্শক পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ আফসান সাবাব বলেন, প্রকল্প গ্রহণের আগে সম্ভাব্যতা যাচাই-সমীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও অনেক প্রকল্পের ক্ষেত্রেই এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় প্রকল্প গ্রহণকারী সংস্থা দায়সারাভাবে ফিজিবিলিটি রিপোর্ট তৈরি করে প্রকল্প অনুমোদন নিয়ে নেয়। এছাড়াও প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থের অপচয় রোধ এবং প্রকল্পের উন্নয়ন টেকসই ও সমন্বয় নিশ্চিত করতে বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে জাতীয় ও আঞ্চলিক উন্নয়নের সাথে স্থানীয় পর্যায়ে একশন প্ল্যান প্রণয়নের পরামর্শ দেন এই পরিকল্পনাবিদ।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইপি’র বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড. এ কে এম আবুল কালাম, বিআইপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ খোন্দকার এম আনসার হোসেন, সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।