‘পুলিশ ম্যানেজ করা আছে, রংপুর-বগুড়া যেখানেই যান ১৫০০ টাকা’

রাজধানীর আশপাশের সাত জেলায় লকডাউন থাকার কারণে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার পরিবহন। আর এ সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে গাবতলী বাস টার্মিনালের দালাল চক্রগুলো। প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে চাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থ। যাত্রীরাও নিরুপায় হয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সকাল থেকে গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, একপ্রকার প্রকাশ্যেই চলছে যাত্রী পরিবহনের বিষয়টি। টার্মিনালে পুলিশি নিরাপত্তা থাকলেও ছিল না তাদের কোনও তৎপরতা। পুলিশের পাশেই প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসে করে যাত্রী ওঠানো হচ্ছিল।

টার্মিনালে আসা দূরপাল্লার গন্তব্য যাওয়া যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারে যাত্রী হয়ে যেতে চাইলে বিভিন্ন গন্তব্যের বিষয়ে লোকজনদের অবহিত করেছিলেন হানিফ কাউন্টারের কর্মরত পরিচয় দেওয়া শাহ মাহবুব। কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, রংপুর পনেরশো, মাগুরা পনেরশো, বগুড়া ১৬শ’, ও রাজশাহী ১৭শ’। কোথায় যাবেন প্রশ্ন করে তিনি ফের বলেন, ‘রাস্তায় পুলিশকে সেট করা আছে, কোনও সমস্যা হবে না’।

গাবতলী বাস টার্মিনালের ভেতরে প্রাইভেট কারে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রী ওঠাচ্ছিলেন ইসলাম। রংপুর যেতে চাইলে ভাড়া কত পড়বে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জনপ্রতি পনেরশো টাকা। হায়েস মাইক্রো বাস, ১১ জন যাত্রী নিয়ে চলে যাবে। সকাল থেকে সাত-আটটি মাইক্রোবাস রংপুর-রাজশাহীসহ বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। সবগুলোতে যাত্রী ফিলাপ ছিল। আর রাস্তায় কোনও সমস্যা হবে না, আমাদের সব ম্যানেজ করা আছে। পুলিশ জিজ্ঞেস করলে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলবে না, বলবে ড্রাইভারদের সঙ্গে।’

গাবতলী বাস টার্মিনাল এর স্টাফ পরিচয় দেওয়া একজন নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘লকডাউনের কারণে বাস চলাচল বন্ধ। ইনকাম বন্ধ। এজন্যই মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারে যাত্রী দিলে কিছু টাকা পয়সা পাই।’

আমেনা বেগম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রংপুর যাওয়ার জন্য মাইক্রোবাসে ওঠে বসেন। তিনি বলেন, ‘জরুরি কাজে যেতে হচ্ছে। তাই ভাড়া বেশি দিয়ে হলেও যেতে বাধ্য হচ্ছি। রাস্তায় কোনও সমস্যা হবে না এবং তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারবো।’

তালেব মিয়া তার স্ত্রীসহ মাগুরা যাওয়ার জন্য প্রাইভেট কারের দর কষাকষি করছিলেন। তবে কোনওভাবেই প্রাইভেট কার সংশ্লিষ্টদের মন গলাতে পারেননি। জনপ্রতি পনেরশো টাকা দিয়ে প্রাইভেট কারে ওঠে বসে। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেতে হবে কিছু করার নেই। তাদেরতো লাভের ওপরে লাভ। গাড়ি যাবে রংপুর, আর আমরা যাব মাগুরা। ওখান থেকে আবার যাত্রী ওঠাবে।’

গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারে করে দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহন হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে গাবতলী জোনের ট্রাফিক ইনস্পেক্টর কাজী মাহাবুব আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী দূরপাল্লার পরিবহন চলাচলের বিষয়টি নজরদারি করছি।’

তিনি দাবি করেন, কোনও ধরনের অসঙ্গতি পেলেই যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে।