বাজারে ‘আগুন’, টিসিবির লাইনে মধ্যবিত্তরাও

সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর ট্রাক সেল। পণ্য হিসেবে আছে– চিনি, সয়াবিন তেল ও মসুর ডাল। এক একটি ট্রাকে ৬০০ লিটার তেল, ৫০০ কেজি চিনি এবং ৪০০ কেজি মসুরের ডাল বরাদ্দ থাকে। এসব বিক্রি শেষ হতে সময় লাগে বড়জোর আড়াই ঘণ্টা।

বাজারে এসব নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তাই ট্রাকের সামনে এখন থাকে দীর্ঘ লাইন। যারা কোনও দিন টিসিবি’র এই লাইনে দাঁড়াননি, তারাও এখন কম দামে টিসিবি’র পণ্য খুঁজছেন। ট্রাক সেলে বরাদ্দ থাকা পণ্য লাইনে অপেক্ষমাণ সবাই নিতে পারেন না। তার আগেই শেষ হয়ে যায় বিক্রি।    

গত শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) থেকে আবারও ট্রাকে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। এই বিক্রি কার্যক্রম আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে এ উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। টিসিবি জানায়, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে টিসিবি কর্তৃক ভর্তুকি মূল্যে সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রি করা হবে। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ট্রাক সেল বন্ধ থাকবে।

টিসিবি’র ট্রাক সেলে একসময় কম দামে নিত্যপণ্য কিনতে আসতো নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা পেশায় কেউ ছিল দিনমজুর, রিকশাচালক, গাড়িচালক কিংবা গৃহকর্মী। এখন সেই লাইনে পণ্য কিনতে দাঁড়াচ্ছেন মধ্যবিত্তরাও।

বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকার কয়েকটি ট্রাক সেলের স্থান ঘুরে এমনটাই জানা যায়। এদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন শিক্ষক, চাকরিজীবী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকায় টিসিবি’র ট্রাক সেল শুরু হয় সকাল ১০টা থেকে। দুপুর ১২টাতেই ট্রাকের পণ্য প্রায় শেষ হয়ে যায়। অথচ তখনও প্রায় ৭০-৮০ জন ক্রেতা লাইনে দাঁড়ানো থাকে। এই লাইনে পণ্যের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক। তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ১১টার দিকে এসেছি। লাইন অনেক লম্বা। তারপরও কিছু করার নেই, বাজার থেকে অনেক কম দামে অন্তত তিনটা পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিনই তেল, চিনি, ডালের প্রয়োজন পড়ে, কম কম করে ব্যবহার করলেও এসব লাগবেই। বাজার থেকে প্রায় ৭০-৮০ টাকা কমে এখানে পাচ্ছি। তাই যত দেরি হোক সমস্যা নেই, নিয়ে যাবো।

লাইনে অপেক্ষমাণ সালেহ উদ্দিন জানান, তিনি আগে কখনও টিসিবি’র লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনেননি। বাজারে যখন নিত্যপণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যায় তখন তিনি ভরসা করেন টিসিবি’র ট্রাকেই।

টিসিবি’র ট্রাকে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১০০ টাকা, চিনি ও মসুর ডাল ৫৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর বাজারে সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, চিনি ৭৮ টাকা এবং দুই প্রকারের মসুরের ডাল ১০০ ও ৮০ টাকা করে।

খামারবাড়িতে টিসিবি’র ট্রাক সেলের দায়িত্বে থাকা মো. মনির হোসেন জানান, বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম, মানুষের আর উপায় কি। আমরা একদিন পর পর এই জায়গায় আসি। একজন ২ কেজির বেশি নিতে পারে না। যে পরিমাণ পণ্য আমাদের দেওয়া হয়, তা দিয়ে লাইনে দাঁড়ানো সবাইকে দেওয়া যায় না। প্রায় সময় ৩০-৪০ ফেরত যায়।

এসব পণ্যের দাম কেন বেশি, বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাইলে তারা উত্তর দিতে পারেনি। এক ব্যবসায়ী জানান, সরকার লস দিয়ে কিংবা ভর্তুকি দিয়ে অনেক কিছুই করতে পারে। আমরা ব্যবসায়ীরা পারি না। আমাদের কেনা দামই বেশি। আমরা কমে কীভাবে বিক্রি করবো।

এমনিতেই ভোজ্যতেলের দাম অনেক বেশি। এরমধ্যে গত রবিবার ব্যবসায়ীরা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে গেলেও তা অপরিবর্তিত রেখেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে পাম তেলের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়ানো হয়। প্রতি লিটার পাম তেলের দাম এখন খুচরায় ১১৬ টাকা। খুচরা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম আগের মতোই প্রতি লিটার ১২৯ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৫৩ টাকা এবং ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৭২৮ টাকা।

টিসিবি’র ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে সিটি এলাকাসহ আশপাশের কয়েকটি জেলায় ৭৯টি ট্রাকে ডিলারদের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি হয়েছে। প্রতিটি ট্রাকে সাধারণত ৬০০ লিটার সয়াবিন তেল, ৫০০ কেজি চিনি ও ৪০০ কেজি মসুর ডাল বরাদ্দ ছিল। তবে বেশি চাহিদার এলাকায় এই বরাদ্দ কিছুটা বেশি ছিল।

240872191_797220204455284_6084571042752623605_n