বর্জ্য বাণিজ্যের প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ

রাজধানীতে যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় বর্জ্য বাণিজ্যের প্রতিবাদ জানাতে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৬০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। শনিবার (২ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় শনির আখড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অনুষ্ঠিত হয় তাদের এই কর্মসূচি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক তারা অবরোধ করায় যানজট সৃষ্টি হয়।

জানা যায়- নুরপুর-১, নুরপুর-২, পাটেরবাগ, মুক্তধারা, ইসলামবাগ (রসুলবাগ, রহমতবাগ, শাহজালালবাগ), পলাশপুর, জনতাবাগ, স্মৃতিধারা, দক্ষিণ রায়েরবাগ, মেরাজনগর (দনিয়ার অংশ), মদিনাবাগ, দক্ষিণ জনতাবাগ এলাকা নিয়ে ডিএসসিসির ৬০ নম্বর ওয়ার্ড।

মানববন্ধনে বক্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি এই ওয়ার্ডে দরপত্রের মাধ্যমে বাসাবাড়ি ও দোকানপাটের বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব পায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এস এম এন্টারপ্রাইজ। কার্যাদেশ অনুযায়ী বাসাবাড়ির বর্জ্য অপসারণের জন্য প্রতি ফ্ল্যাট থেকে নির্ধারিত ১০০ টাকা করে নেওয়ার কথা। কিন্তু তারা ১৫০-২০০ টাকা করে নিচ্ছে। এছাড়া দোকানপাট থেকে মাসে ৩০ টাকার পরিবর্তে দৈনিক ১০-৩০ টাকা হারে টাকা নেওয়া হচ্ছে। ফলে মাসে এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০০-৯০০ টাকা। স্থানীয়দের অভিযোগ, কেউ বেশি টাকা দিতে না চাইলে তারা বর্জ্য নেয় না। এতে ডিএসসিসির ৬০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জিম্মি হয়ে পড়েছেন।

ডিএসসিসি’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলের দাবি তুলে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘বর্জ্য সংগ্রহ নিয়ে বাণিজ্যের কারণে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এখন পুরো ওয়ার্ডের সব রাস্তায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ পড়ে থাকে। সেখান থেকে দুর্গন্ধ ও রোগ-জীবাণু ছড়াচ্ছে এবং মশা-মাছির উৎপত্তি হচ্ছে। এছাড়া বেশি টাকা দেওয়া লাগবে দেখে অনেকে নালা, ড্রেন, খাল ও রাস্তার পাশে ময়লা ফেলছেন।’

শনির আখড়ায় বর্জ্য বাণিজ্যের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

কর্মসূচিতে স্থানীয়দের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ফারুক আহমেদ। তার কথায়, ‘গত বছরও এস এম এন্টারপ্রাইজ এই ওয়ার্ডে বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব পেয়েছিল। তখন তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে তিনবার শোকজ করেছিল ডিএসসিসি। এবারও সেই একই প্রতিষ্ঠানকে ডিএসসিসি দায়িত্ব দিয়েছে। এখন বাড়তি টাকা না দিলে ইজারাদার নিজে ও তার সহযোগীরা বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে গিয়ে গালি দিচ্ছেন, মারধর করছেন। এককথায় এই ওয়ার্ডের সবাই ওই ঠিকাদারের কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছে।’

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, এসএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারীর নাম শফিক। তিনি নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা বলে পরিচয় দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওয়ার্ডের সবাইকে শফিক বলে বেড়ান, ‘আমি মেয়রের লোক। মেয়রের এপিএস সজিব একান্তই আমাদের কাছের লোক। বর্জ্য বিভাগের প্রধানকে তিন লাখ টাকা দিয়েছি। বিভিন্ন টেবিলে ৩০ লাখ টাকা খরচ করে এই কাজ এনেছি। তাই মেয়রের কাছে অভিযোগ করে কোনো লাভ নেই। আমি টাকা বেশিই নেবো।’

মানববন্ধনের শেষ পর্যায়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন ৬০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এতে ঢাকামুখী সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় ১০ মিনিট পর নিজেরাই অবরোধ তুলে নেন তারা।