প্রণোদনা ও সুদমুক্ত ঋণসহ ১১ দফা দাবি কৃষক-খেতমজুর সংগ্রাম পরিষদের

করোনা মহামারি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও খেতমজুরদের নগদ আর্থিক প্রণোদনা এবং সুদমুক্ত ঋণ প্রদানসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে কৃষক-খেতমজুর সংগ্রাম পরিষদ।

বুধবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে সংগঠনটি এ কথা জানায়।

সংগঠনের নেতারা বলেন, করোনা প্রণোদনা প্যাকেজে কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও প্রকৃত কৃষক (ভূমিহীন, গরিব ও বর্গা কৃষক) এ প্রণোদনার অর্থ পায়নি। সরকার দলীয় বিবেচনায় কৃষি কার্ডধারী অকৃষক ও প্রভাবশালীরাই স্বল্প সুদের কৃষিঋণ, সার, বীজ ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা ভোগ করছে। করোনা মহামারির মধ্যে গ্রামের খেতমজুর, দিনমজুর ও অন্যান্য শ্রমজীবীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেনি সরকার।

তারা বলেন, মোট গ্রামীণ শ্রমশক্তির ৬০% নিয়োজিত কৃষিতে। জিডিপির প্রায় ১৬% আয় আসে কৃষি থেকে। অথচ কৃষক উৎপাদিত ফসলের লাভজনক মূল্য থেকে বঞ্চিত। বোরো আউশ আমন মৌসুমে সরকার সিংহভাগ ধান কৃষকদের কাছ থেকে না কিনে মিল মালিক, ব্যবসায়ী ও দলীয় নেতা-কর্মীদের নিকট থেকে কিনছে। ফলে অধিকাংশ কৃষক সর্বস্ব হারিয়ে ভূমিহীনে পরিণত হচ্ছে। খেতমজুর ও গরিব মানুষেরা শহরে এসে কাজ খুঁজছে এবং মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

করোনার মধ্যে দরিদ্রতা বেড়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন,  আগের ৪ কোটি দরিদ্রের সাথে আরও আড়াই কোটি দরিদ্র যোগ হয়েছে। ধনী ও গরিবের বৈষম্য অকল্পনীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে চাল, ডাল, তেল, চিনি, গমসহ সকল পণ্য সামগ্রীর দাম পাগলা ঘোড়ার মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলছে। সরকার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে একেবারে ব্যর্থ হয়েছে।

অতীতের মতো এবছরও উজানে ভারত কর্তৃক প্রায় সকল নদীর উপর নির্মিত বাঁধের গেট খুলে দেওয়ায় এখন বাংলাদেশ বন্যায় সয়লাব হয়ে গেছে -  অভিযোগ করে সংগঠনটি থেকে বলে, নদী ভাঙ্গনে কৃষি জমি ও জনপদ ধ্বংস হচ্ছে। প্রায় ৪ কোটি মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পতিত হয়েছে। সরকারের নতজানু নীতির কারণে ভারতের কাছ থেকে অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা আদায় করা যাচ্ছে না।

তারা বলেন, করোনার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের ব্যবস্থাপত্র অনুসারে সকল রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল ও ৬টি চিনিকল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে অর্থনীতিতে ভয়াবহ বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ প্রক্রিয়ায় অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত্ব খাতও ক্রমান্বয়ে বন্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।

মানববন্ধন থেকে তারা দাবি জানায়, উৎপাদন খরচের সাথে বাড়তি ৪০% যুক্ত করে কৃষি ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত করে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। কৃষি উপকরণের দাম কমানোসহ কৃষি জমি ধ্বংস রোধ করতে হবে।

এছাড়াও, করোনা মহামারি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও খেতমজুরদের নগদ আর্থিক প্রণোদনা এবং সুদমুক্ত ঋণ দানসহ আরও ১১ দফা দাবির কথা জানান তারা।